ডায়রিয়া ও কলেরা পরিস্থিতি

ডায়রিয়া ও কলেরা পরিস্থিতি: নিরাপদ পানি ও সতর্কতা অবলম্বন এই রোগের অন্যতম প্রতিরোধ ব্যবস্থা

প্রতিবছরই গরম এলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। এই বছরও তার ব্যতিক্রম নয় বরং অন্যান্য বছরের তুলনায় আগেই মারাত্মক ডায়রিয়া শুরু হয়েছে, কোন কোন এলাকায় এই হার অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ইতিমধ্যে কলেরা বিস্তারের কথা জানিয়েছে। চল্লিশ বছরের মধ্যে এত বেশি ডায়রিয়া ও কলেরায় আক্রান্ত রোগী আইসিডিডিআরবি-তে ভর্তি হয়নি। গত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালটিতে ঘণ্টায় গড়ে ৮০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। মোট আক্রান্তের কমপক্ষে ২৩ শতাংশ কলেরার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে।

কলেরার উপসর্গ: সাদা চালধোয়া পানির মতো পাতলা পায়খানা হয় এবং শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে যায় ।

চিকিৎসকদের মতে নিম্নলিখিত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ডায়রিয়ার থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

  • পানি ফুটিয়ে পান করা।
  • রাস্তার পাশের খোলা খাবার বা শরবত জাতীয় পানি গ্রহণ না করা।
  • বাইরে গেলে সঙ্গে সহজ বহনযোগ্য পাত্রে নিরাপদ পানি রাখা।
  • পানির বোতল বা পানি রাখার পাত্র জীবাণুমুক্ত রাখা।
  • শিশুরা যাতে হাত ধোয়া, কুলি করা বা মুখ ধোয়া ইত্যাদি কাজের ফুটানো পানি ব্যবহার করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • যেকোনো খাবার গ্রহণের আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করা।
  • ভালো করে গরম না করে বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।
  • জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেকেই একসাথে কয়েকদিনের খাবার রান্না করে রাখছেন, এটি পরিহার করতে হবে।

ডায়রিয়া বা কলেরা হলে করণীয়

  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, বারবার খাবার স্যালাইন খেতে হবে। সঙ্গে অন্যান্য তরল যেমন পানি, ডাবের পানি, চিড়ার পানি ইত্যাদিও খেতে পারেন। পানিশূন্যতা যেন না হয়ে যায়, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।
  • শিশু ও প্রবীণদের পানিশূন্যতার ঝুঁকি বেশি থাকে তাই তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে মারাত্মক পানিশূন্যতার লক্ষণ হচ্ছে প্রস্রাব না হওয়া, কাঁদলে চোখে পানি না আসা, নেতিয়ে যাওয়া, চোখ গর্তে ঢুকে যাওয়া। 
  • এই পরিস্থিতিতে খাবার বন্ধ করা যাবে না। সব ধরনের পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং পরিচ্ছন্ন খাবার গ্রহণ করতে হবে।
  • শিশুদের জন্য মায়ের বুকের দুধ দেওয়া বন্ধ করা যাবে না।
  • পানিশূন্যতা দেখা দিলে, ডায়রিয়ার সঙ্গে বারবার বমি, জ্বর, পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া ও পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে রোগীকে চিকিৎসক অথবা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতে হবে।  বিশেষ করে শিশুদের বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না।

চালের গুড়ার স্যালাইন ডায়রিয়া থেকে অনেক শিশুর প্রাণ রক্ষা করবে

যে অঞ্চলের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি সেখানে বাজারের প্যাকেটজাত স্যালাইনের কার্যকারিতা আশানুরূপ হয় না। এইসব এলাকায় ঘরে তৈরি চালের গুঁড়ার স্যালাইন বেশি কার্যকরী হতে পারে।

কিভাবে চালের গুঁড়ার স্যালাইন বানাবেন

চালের গুঁড়ার স্যালাইন বানাতে প্রথমে একটি পরিষ্কার পাত্রে আধা সেরেরও কিছু বেশী নিরাপদ পানি নিতে হবে। এবার এতে পাঁচ চা চামচ চালের গুঁড়ো মিশাতে হবে। এরপর মিশ্রণটি ৩ থেকে ৫ মিনিট চুলায় জ্বাল দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ করার সময় একটি পরিষ্কার চামচ দিয়ে বার বার নাড়াতে হবে। না নাড়ালে চালের গুঁড়া জমে যাবে। মিশ্রণটি চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে দিতে হবে। (পানি লবণাক্ত হলে লবণ মেশানোর দরকার হবে না) খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলো চালের গুঁড়ার স্যালাইন। তৈরীর পর কোন স্যালাইন ৬ থেকে ৭ ঘন্টার বেশী রাখা উচিত নয়; প্রয়োজনে, আবার নতুন করে খাবার স্যালাইন তৈরী করে নিতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *