ডেঙ্গু সতর্কতা

সতর্কবার্তা বার্তা ১১, আগস্ট ২০২১

জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। করোনাজনিত মৃত্যু ঝুঁকি যখন গুরুতর আকার ধারণ করেছে ঠিক তখনই ডেঙ্গু জ্বর আশংকাজনক হারে বাড়ছে। ঢাকার শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত একাধিক শিশুকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়েছে। জ্বর, মাথা ব্যথা, চোখে ব্যথা, শরীরে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, শরীরে পানি আসা, গায়ে র‍্যাশ ওঠা- এসব লক্ষণ নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে আসছে।এপর্যন্ত হাসপাতালে ২০০ জনের বেশি শিশু ভর্তি হয়েছে যার মধ্যে ৪ জন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তাই শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

মশার কামড় থেকে বাঁচাতে শিশুদের সাদা বা হালকা রঙের ফুলহাতা পোশাক পরান। হাতে–পায়ে মশা নিরোধক মলম লাগাতে পারেন। বাড়িতে নেট ও মশারি ব্যবহার করুন

এডিস মশা ডেঙ্গু ছড়ায়। এডিস মশা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। তাই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে বাড়ি বা আঙ্গিনার কোথাও যেন পানি তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি জমা না থাকে। বর্তমানে দীর্ঘ লকডাউনের কারণে অনেকেই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন এবং খালী বাসায় গাছের টবে, অব্যবহৃত টায়ারে, কমোডের মধ্যে, পাত্রের মধ্যে পানি জমে তাতে এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটতে পারে। তাছাড়া বাসার সিঁড়ি ঘরে, পানির চৌবাচ্চায় (হাউজে) এবং ছাদে দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকলে সেখানে এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে। এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে সতর্ক থাকতে হবে এবং উপরোক্ত জায়গা গুলোতে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। তাছাড়া ডাবের খোসা, চিপসের খোলা প্যাকিটেও পানি জমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও করণীয়

১. সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর।

১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এর সাথে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‍্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।

২. জ্বর হলেই কি চিন্তিত হবেন?

বর্তমান সময়ে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে। কোন ভাবেই এই সময় জ্বরকে অবহেলা করা উচিত নয়।

৩. বিশ্রামে থাকতে হবে

জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকা ভাল।

৪. খাবার

প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন – ডাবের পানি, লেবুর শরবত, তাজা ফলের রস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে শুধু পানিই খেতে হবে, তরল খাবার খেলেও চলবে । 

৫. যেসব ওষুধ খাওয়া উচিত নয়

চিকিৎসকরা বলেন ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। কিন্তু কারো যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

৬. প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা  

সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্লাটিলেট কাউন্ট থাকে দেড়-লাখ থেকে সাড়ে চার-লাখ পর্যন্ত।

৭. ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?

অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা হতে পারে, প্রচুর বমি হতে পারে, নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে এবং রোগী কিছুই খেতে পারেনা এসব ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *