Foundation For Disaster Forum

(A Disaster Preparedness Network)
দুর্যোগ ফোরাম

সতর্কবার্তা বার্তা

         ১৬ নভেম্বর ২০২২

নিপাহ ভাইরাস: সতর্কতাই একমাত্র মুক্তি

প্রতি বছর শীত আসার সাথে নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিপাহ ভাইরাস মূলত বাদুড় থেকে ছড়ায়। রস সংগ্রহের হাড়ি/পাত্রটি খোলা থাকায় ভাইরাস আক্রান্ত বাদুড় খুব সহজেই রস পান করতে করতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিতে পারে।

যেভাবে ছড়ায়

১. আক্রান্ত প্রাণী থেকে নানাভাবে মানুষের মাঝে ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করে থাকে। আবার অসুস্থ মানুষ থেকে মানুষেও এই ভাইরাস ছড়ায়।
২. সাধারণত বাদুড়ের লালা, মলমূত্র, শ্বাস-প্রশ্বাস ও সংস্পর্শের মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে থাকে।
৩. বাদুড় যখন খেজুর গাছে বাঁধা হাঁড়ি থেকে রস পান করে তখন ভাইরাস কাঁচা খেজুর রসে বংশবৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে এই রস পান করার মাধ্যমে মানুষ নিপাহ ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। আবার আক্রান্ত মানুষ থেকে সুস্থ মানুষেও ভাইরাসটি রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
৪. নিপাহ ভাইরাস বাদুড়ে থাকার সময় বাদুড়ে কোনো প্রকার রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিন্তু ভাইরাস মানবদেহ ও শূকরসহ অন্যান্য মধ্যবর্তী বাহকে প্রবেশ করলে ৭-১৪ দিনের মধ্যে নানারকম রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে।

নতুন আরেক সমস্যা

খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য ইদানিংকালে মাটির হাঁড়ির বদলে ব্যবহৃত হচ্ছে বাতিল প্লাস্টিকের বোতল। মাটির হাঁড়ি দীর্ঘ সময় ধরে সংগ্রহের জন্য গাছিরা পাত্রটি বার বার ধুয়ে রোদে ও আগুনে শুকাতো, যা কিনা পাত্রের মধ্যে থাকা রোগ-জীবাণুর পরিমান কমিয়ে আনত। প্লাস্টিকের সরু গলার বোতলে সেটি সম্ভব নয়। অপরিচ্ছন্ন বোতলে সহজে নানান ধরনের জীবানু বাসা বাঁধে। এছাড়াও একবার ব্যবহারের জন্য তৈরী প্লাস্টিকের বোতল মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর।

লক্ষণ

১. ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সর্দি-জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
২. আক্রান্ত ব্যক্তি জ্বরে ভোগেন।
৩. গলা ব্যথা, মাথা ধরা শুরু হয়।
৪. রোগীর বমি হয় এবং মাংসপেশী ব্যথা করে।
৫. যদি সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে শ্বাসযন্ত্রে মৃদু থেকে মারাত্মক প্রদাহ হয়। তখন মারাত্মক শ্বাসকষ্ট হয়। এভাবে নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়।
৬. রোগ সংক্রমণের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেলে মস্তিষ্কের কোষ ও কলায় প্রদাহ হয়। ফলে ঝিমুনি, মাথা ঘোরা, অসংলগ্ন কথাবার্তা এবং স্নায়বিক নানা প্রকার উপসর্গ প্রকাশ পায়।
৭. পরিশেষে এনসেফালাইটিস বা প্রদাহের কারণে রোগী ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে কোমায় গিয়ে মারা যেতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

১. ফলমূল খাওয়ার পূর্বে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়া গাছ থেকে ঝরে পড়া ফল কিংবা গাছে ধরা ফল খাওয়ার আগে ফলগুলি ভালভাবে ধুয়ে এবং খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া উচিৎ।বাদুড়ের কামড়ের চিহ্ন দেখতে পেলে সেই ফল সাথে সাথে ফেলে দিতে হবে।
২. আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা। এমনকি মৃতদেহ কবর দেওয়া, গোসল করানো, সৎকার করা ও মৃত ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার সময়ও যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৩. উন্নতমানের মাস্ক বা মুখোশ পরিধান করতে হয়।
৪. সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত পরিষ্কার করতে হবে।
৫. আংশিক খাওয়া ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬. যথাযথ ব্যবস্থাপনা না নিয়ে প্রাণীদের ঘরের আশপাশে না যাওয়া।
৭. খেজুরের রস পান করার পূর্বে ভালভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। রস ফুটিয়ে ও খেজুর রসের গুড় খেতে কোনো সমস্যা নেই।
৮. খেজুর রস সংগ্রহের হাড়ি খোলা না রেখে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. শিশুদের প্রতি আলাদা নজর দিতে হবে।
১০. গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঢেকে রাখতে হবে।

Leave a Reply