সাপে কাটলে করণীয়, বর্জনীয় এবং চিকিৎসা

সাপে কামড় দিলে কি করবেন?

  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে বার বার আশ্বস্ত করতে হবে এবং সাহস দিতে হবে, আতঙ্কগ্রস্ত হতে দেয়া যাবে না। কেননা, নির্বিষ সাপের কামড়েও আতঙ্কিত হয়ে মানসিক আঘাতে মারা যেতে পারে। (বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপই বিষহীন। হাতেগোনা কিছু সাপ বিষধর। আবার, বিষধর সাপ পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ ঢুকিয়ে দিতে ব্যর্থ হতে পারে। এসব জানানোর মাধ্যমে রোগীকে আশ্বস্ত করা যেতে পারে) ।
  • আক্রান্ত অঙ্গ অবশ্যই স্থির রাখতে হবে। হাতে হলে হাত নড়ানো যাবে না। পায়ে হলে হাঁটাচলা করা যাবে না, স্থির হয়ে বসতে হবে।
  • আক্রান্ত অঙ্গ ব্যান্ডেজের সাহায্যে একটু চাপ দিয়ে প্যাঁচাতে  হবে। একে প্রেসার ইমোবিলাইজেশন বলে। ব্যান্ডেজ না পাওয়া গেলে গামছা, ওড়না বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে।
  • ঘড়ি বা অলঙ্কার বা তাবিজ’, ‘তাগা’ ইত্যাদি পড়ে থাকলে খুলে ফেলুন।
  • রোগীকে আধাশোয়া অবস্থায় রাখুন।
  • যদি রোগী শ্বাস না নেয় তাহলে তাকে মুখে শ্বাস দেয়ার ব্যবস্থা করুন।
  • যদি সাপটিকে ইতোমধ্যে মেরেই ফেলেন, তাহলে সেটি হাসপাতালে নিয়ে আসুন। তবে এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনোভাবেই হাত দিয়ে ধরা যাবে না। কেননা কিছু সাপ মরার ভান করে থাকে। তবে সাপ মারতে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
  • যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

যে কাজগুলো কোনোভাবেই করা যাবে না

না জেনে আমরা এমন কিছু কাজ করি, যা রোগীর জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি।

  • কোনো ধরনের শক্ত বাঁধন/গিঁট দেওয়া যাবে না। সাধারণত দেখা যায়, হাত বা পায়ে কামড় দিলে, কামড়ানো জায়গা হতে উপরের দিকে দড়ি বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে শক্ত করে বাঁধা হয়, যাতে বিষ ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। বরং এতে বন্ধনকৃত হাত/পায়ে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে রক্ত প্রবাহের অভাবে টিস্যুতে পচন (Necrosis) শুরু হতে পারে।
  • চিকিৎসার জন্য ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
  • কামড়ানো স্থানে ব্লেড, ছুরি প্রভৃতি দিয়ে কোনো প্রকার কাটাকুটি করা যাবে না।
  • অনেক মানুষের ধারণা, আক্রান্ত স্থানে মুখ লাগিয়ে চুষে বিষ বের করলে রোগী ভালো হয়ে যাবে। বিষ রক্ত এবং লসিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা কোনোভাবেই চুষে বের করা সম্ভব নয়। তাই কোনো অবস্থাতেই আক্রান্ত স্থানে মুখ দেয়া যাবে না।
  • কোনো ধরনের ভেষজ ঔষধ, মুখের লালা, পাথর, উদ্ভিদের বীজ, গোবর, কাদা ইত্যাদি লাগানো যাবে না।
  • কোনো রাসায়নিক পদার্থ লাগানো বা তা দিয়ে ছ্যাঁক দেয়া যাবে না।
  • যদি আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো কিছু গিলতে বা কথা বলতে সমস্যা হয়, বমি, অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ, নাসিক কন্ঠস্বর ইত্যাদি দেখা দেয় তাহলে কোনো কিছু খাওয়ানো যাবে না।
  • কোনো কিছু খাইয়ে বমি করানোর চেষ্টা করা যাবে না।
  • ব্যাথা নিবারণের জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।

অ্যান্টিভেনম সম্পর্কে কিছু তথ্য

সাধারণত বিষধর সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে অ্যান্টিভেনম দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। অ্যান্টিভেনম বা প্রতিবিষ শরীরে সাপের বিষকে ধ্বংস করে দেয়। সাধারনত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে থাকে। জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম থাকে এবং শুধুমাত্র হাসপাতালের রেজিস্টার্ড ডাক্তারই সাপের ধরন, কামড়ের ধরন ও উপসর্গ প্রভৃতি দেখে অ্যান্টিভেনমের ব্যপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন এবং রোগীর/রোগীর অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর দেহে প্রয়োগ করবেন। চিকিৎসকদের মতে, সাপে কাটা একজন রোগীকে শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী অ্যান্টিভেনম দিতে হয়। অনেকসময় একজন রোগীকে আট থেকে ১০ ভায়াল (১ ভায়াল=১০ এমএল) অ্যান্টিভেনমও দিতে হয়। নিজ নিজ জেলায় কোন হাসপাতালে কি পরিমান এনটিভেনাম আছে সেটা জেনে প্রচার করুন।

Leave a Reply