Foundation For Disaster Forum

(A Disaster Preparedness Network)
দুর্যোগ ফোরাম

সতর্কবার্তা বার্তা

         ৩ জানুয়ারী ২০২২

শীতে গরম পানি ব্যবহার ও আগুন পোহাতে গিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় সতর্কতা

ইতোমধ্যেই সারাদেশে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে, আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এ রকম ঠান্ডা থাকবে কয়েকদিন।

শীতে গরম পানি ব্যবহার ও আগুন পোহাতে গিয়ে মৃত্যু ঝুঁকি

শীতের সময় অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা দেখা যায় শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে আগুন পোহানোর সময় দগ্ধ হন অনেকে। আগুনে দগ্ধ হয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে বেশি মানুষ মারা যান। শীতে সাধারণত নারী, শিশু এবং প্রবীণদের দগ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে অসতর্ক অবস্থায় আগুনের কাছে যাওয়া কিংবা গরম পানিতে হাত দিয়ে ফেলা এবং নারীদের ক্ষেত্রে শাড়ির আঁচল, চাদর, উলের চাদরের মতো কাপড়ে আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

ইতিমধ্যে আগুন পোহাতে গিয়ে রংপুরে দগ্ধ হয়েছে ছয় বছরের এক শিশু। ফরিদপুরে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে পাঁচ বছরের এক শিশু মারা গেছে। আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ২৪ জন । শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি বেশির ভাগ রোগীই শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া রাজশাহী ও রংপুরেও দগ্ধ হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অভিভাবকদের অসচেতনতা ও খামখেয়ালিতে এমন ঘটনা ঘটছে। শীতে আগুনের উত্তাপ নেওয়ার প্রতি সব বয়সী মানুষেরই ঝোঁক থাকে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এ সময় আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ে। সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী, শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি ১১ জন আগুনে রোগীর মধ্যে, শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছে ছয়জন।

কখনও কখনও গরম পানি দিয়ে গোসলের সময় পানি মাত্রাতিরিক্ত গরম থাকায় তাতেও দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটতে পারে। আগুন লাগার পরে তাৎক্ষণিক কি করতে হবে তা বেশিরভাগ মানুষ বুঝতে পারে না। ব্যবস্থা নেয়ার আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরনে থাকা উলের তৈরি সোয়েটার, লেপ, কাঁথা বা কম্বল এমন ভারী কাপড়ে অনেক দ্রুত আগুন ছড়ায় এবং তার তীব্রতা বেশি থাকে। ফলে পুড়ে যাওয়ার মাত্রাও তুলনামূলক বেশি হয়। গরম পানির ব্যবহার ও আগুন পোহানোর সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এই দুর্ঘটনার হার কিছুটা কমানো যাবে।

আগুন পোহাতে সতর্কতা

১. শীতের সময় সাধারণত গরম পানির ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়, এই সময় শিশুদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও প্রতিবন্ধীদের গোসলের পানি বা অন্যান্যদের গোসলের গরম পানি ইত্যাদির কাছাকাছি যেন না যায় তা খেয়াল রাখতে হবে।
২. গ্রামাঞ্চলে নারীরা সাধারণত শাড়ি পরেন। শীত সহ্য করতে না পেরে বাড়ির পাশেই খড়ের মধ্যে আগুন ধরিয়ে তাপ নেন অনেকে। এমন সময় শাড়ির আঁচলে আগুন লেগে গেলে শীতের তীব্রতার কারণে বোঝা যায় না। এই ক্ষেত্রে শাড়ি ভালোভাবে পেঁচিয়ে রাখতে হবে।
৩. ইদানিংকালে গ্রামে শাড়ির বদলে মেক্সি পড়ার হার অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আগুন পোহাতে গেলে আরও বেশি সাবধান হতে হবে। আগুন পোহানোর সময় গায়ের ওড়নাসহ মেক্সি ভালোভাবে গুছিয়ে নিতে হবে।
৪. শীতের মধ্যে এলাকার কিশোর বালকরা মিলে কৃষকের খড়ের গাদার পাশে আগুন জ্বেলে তাপ পোহাতে গিয়ে সেই গাদা পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। কৃষকের জন্য এ ক্ষতি অপূরণীয়। কৃষকের খড় যেখানে আছে তার থেকে দূরে আগুন পোহালে ভালো। সম্ভব হলে আশেপাশে কৃষকের খড় বা কারো ঘর নাই এমন স্থানে আগুন পোহানো ভালো।
৫. আগুন পোহানো হয়ে গেলে আগুন ভালোভাবে নিভিয়ে দিতে হবে। অজান্তে কোন ব্যক্তি বা প্রাণী সেখানে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৬. যারা বার্বিকিউ পার্টি করবেন তারা যতোটা সম্ভব সাবধানে সেটা করবেন। কাজ হয়ে গেলে নিশ্চিত হোন আপনার ফায়ার প্লেসের আগুন পুরোপুরি নিভেছে কি-না। সামান্য আগুনের ফুলকা থেকেও বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৭. এছাড়া অনেক সময় গরম কাপড় শুকানোর জন্য চুলার উপর দড়ি টেনে কাপড় শুকানোর ব্যবস্থা করা হয়, এই কাজটি একবারেই করা যাবে না।

Leave a Reply