শিশুরা কি ক্রমশ ‘রাষ্ট্রহীন’ হয়ে যাচ্ছে

শিশু নির্যাতন নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন গওহার নঈম ওয়ারা (প্রকাশ:২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ )

শিশুদের খেলার মাঠ কেড়ে নেওয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ঠিকাদারের কাছে বন্ধক রাখা হয়। গাছের সঙ্গে বেঁধে পেটানো হয়। কিন্তু তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না।

রাষ্ট্রহীন এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যাঁরা কখনো কোনো আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করেননি।

শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, কর্মসংস্থান, সামাজিক কল্যাণ, নিবন্ধন, সম্পত্তির মালিকানার অধিকার, নিরাপদ চলাচলসহ সব ধরনের অধিকার থেকে তাঁরা বঞ্চিত।

গত দুই–তিন বছরে প্রায় প্রতিদিনই রোমহর্ষ ঘটনার ভুক্তভোগী হয়েছে শিশুরা। সব খবর পত্রিকার পাতা, নিউজ পোর্টাল বা টেলিভিশনের পর্দা পর্যন্ত যায় না।

শিশুরা বিশেষ করে প্রান্তিক শিশুরা ক্রমশ যেন রাষ্ট্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বা তাদের সরিয়ে রাখা হচ্ছে। কেউ তাদের কথা শুনছে না। তাদের নিয়ে কেউ কি ভাবছে! ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সম্প্রতি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ হয়েছে। এ সময় অনেক শিশু প্রশ্ন করেছে—এ দেশ কি শুধুই বড়দের (বড় বলতে বয়সের চেয়ে বিত্তকেই তারা বুঝিয়েছে বেশি)? তারা যেন তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রটাকে দেখতে পারছে না। তাদের জন্য এই রাষ্ট্র কিছু করছে না। এ জন্য তারা নিজেদের অনেকটা ‘রাষ্ট্রহীন’ ভাবছে।

সাধারণত কেউ যখন নিজের দেশের আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে অন্য একটা দেশে গিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করেন, তখন তাঁকে রাষ্ট্রহীন বলা হয়। আশ্রয়প্রার্থী দেশ তাঁদের আশ্রয়ের আবেদন মনজুর না করা পর্যন্ত তাঁরা রাষ্ট্রহীন। তাই আন্তর্জাতিক আইনে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি হচ্ছেন এমন একজন, যাকে কোনো দেশই তার রাষ্ট্রীয় আইনের অধীনে নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে না।’

নাগরিক বিবেচনা না করার অর্থ কী? সোজাসাপটা অর্থ হচ্ছে, তাঁর জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ চিন্তিত নয়, তাঁর কোনো কিছু চাওয়ার অধিকার নেই। সুরক্ষা নেই, নিরাপত্তা নেই। বৈষম্য ও অসম আচরণের শিকার হলেও বিহিত পাওয়ার কোনো রাস্তা নেই।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, রাষ্ট্রহীন এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যাঁরা কখনো কোনো আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করেননি। এমনকি পরিবার বা সমাজের সীমানাও তাঁরা অতিক্রম করেননি। সমাজ–পরিবারের সব নিয়মনীতি মেনেই তাঁরা চলছেন। কিন্তু তাঁদের আওয়াজ, মতামত শোনার কেউ নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, কর্মসংস্থান, সামাজিক কল্যাণ, নিবন্ধন, সম্পত্তির মালিকানার অধিকার, নিরাপদ চলাচলসহ সব ধরনের অধিকার থেকে তাঁরা বঞ্চিত। কোনো অবস্থাতেই তাঁরা স্বাধীন ও সমান নন।

সম্প্রতি কুন্তলা লাহিড়ী দত্ত ও গোপা সামান্তার বই ডান্সিং উইথ দ্য রিভার: পিপল অ্যান্ড লাইফ অন দ্য চর্স অব সাউথ এশিয়া বেশ সাড়া ফেলেছে। বইটিতে পশ্চিম বাংলার নদী দামোদরের ভেতরে জেগে ওঠা কিছু চরের বাসিন্দাদের রাষ্ট্রহীন হয়ে বসবাসের কথা বলা হয়েছে। ‘চরুয়া’ নামের নয়া তকমা পাওয়া এই সম্প্রদায় ‘পরিবেশের একটা অশাসনীয় এবং সীমানাশূন্য’ পরিস্থিতিতে বসবাস করছেন। আমাদের ব্রহ্মপুত্র বা যমুনা কিংবা পদ্মার চরের প্রান্তিক মানুষের মতো তাঁরা প্রান্তিক। তবে তাঁদের প্রান্তিকদের মধ্যেও বলা যায়। কারণ, তাঁদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না। তাঁদের আওয়াজ কেউ কানে তোলে না।

বইটির পাতায় চোখ বোলাতে বোলাতে আমাদের দেশের শিশুদের কথা বারবার মনে পড়ছিল। অবলীলায় তাদের খেলার মাঠ কেড়ে নেওয়া যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ঠিকাদারের কাছে বন্ধক রাখা যায়। বাড়ি থেকে ডেকে এনে গাছের সঙ্গে বেঁধে ধড়ক–বেধড়ক পেটানো যায়।

কান্নার আর বেদম মরধরের ছবি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। চুরির অপবাদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাত বেঁধে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরানো যায়। চুল কেটে দেওয়া যায়। থানা কিছুই জানে না বা জানার চেষ্টাও করে না। কেউ তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেনি বলেই অপরাধীরা খালাস পায়। থানা–পুলিশের সাফ কথা, অভিযোগ না করলে, ভুক্তভোগী মেনে নিলে তারা কী করবে? কেউ অভিযোগ করলে বা বাদীর কাগজ পেলে তবেই তদন্ত করে দেখা যাবে ইত্যাদি।

এ দেশে শিশুদের পিটিয়ে মেরে ফেললেও কেউ ‘স্বতঃপ্রণোদিত’ হন না। এক সংসদ সদস্য এটাকে শৃঙ্খলা রক্ষার উপাদান বলে মনে করেন। ‘শাসন করা খারাপ কিছু নয়’ বলে তিনি এটাকে বৈধ বলে রায় দিয়ে দিলেন। নিশ্চয় সব সংসদ সদস্য তাঁর সঙ্গে একমত হবেন না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাঁর এমন দায়িত্বহীন বক্তব্যের প্রতিবাদও কেউ করেননি।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রদী এলাকার কথাই ধরা যাক। ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে সেখানে একটি পরিত্যক্ত কারখানার কাছে তিনটি শিশু খেলাধুলা করছিল। তাদের খেলার উপাদান ছিল কুড়িয়ে পাওয়া কিছু নাটবল্টুসদৃশ বস্তু। এখানেই বাধল বিপত্তি।

কারণ, কারখানার মালিক যে সে নন, তিনি ওই এলাকার পৌর মেয়র হালিম সিকদার। তাঁর কারখানার নাটবল্টু শিশুরা চুরির চেষ্টা করেছে—এমন অভিযোগ এনে খেলাধুলারত শিশুদের লোক দিয়ে ধরে নিয়ে বেঁধে রাখেন। তারপর শিশুদের হাত বেঁধে কয়েক কিলোমিটার হাঁটিয়ে প্রকাশ্যে এবড়োখেবড়ো করে মাথার চুল কেটে দেয় তাঁর লোকেরা।

৮–১০ বছরের এসব শিশুকে মেয়র টোকাই বলেছেন। তাঁর কথা শুনে মনে হবে, আমার আপনার সন্তান হলে কথা ছিল। টোকাইদের ‘প্যাদানি’ দেওয়ার অধিকার তাঁদের আছে। সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, ‘আপনারা সবাই বলতাছেন, এরা নাকি ছাত্র। এরা তো টোকাই। ওরা বিভিন্ন ভাঙাচোরা যন্ত্রপাতি পাইলেই ওইখান থেকে চুরি কইরা বেচে দেয়। তিন মাস ধইরাই আমার মিলের অনেক মেশিন চুরি করেছে ওরা। আজকে হাতেনাতে ধরছি। ওদের বাড়িতেই আমি বসে আছি, আপনারা আসেন আমার কাছে।’

শিশু নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে সংবাদকর্মীরা আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানিয়েছিলেন, ‘এমন অভিযোগ থানায় করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি।’

তবে ফেসবুক আর গণমাধ্যমের কল্যাণে শিশু নির্যাতনের বিষয়টি চারদিকে চাউর হয়ে যায়। পরে ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে আড়াইহাজার থানায় একটি মামলা করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য বলছেন, সাংবাদিকদের ধমক খেয়ে থানার ওসি ভয় পেয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছেন।

সংসদ সদস্য যা–ই বলুন না কেন, মামলা একটা হয়েছে। বাদী হয়েছেন ভুক্তভোগী শিশুদের এক অভিভাবক। যে দুই গরিব নরসুন্দর মেয়রের নির্দেশে শিশুদের চুল কেটে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁদের আসামি হিসেবে ফটক বন্দী করা হলেও মূল হোতা মেয়রকে পুলিশ ‘খুঁজে’ পাচ্ছে না।

৮ ফেব্রুয়ারি সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলামকে (বাবু) জেলা আদালত প্রাঙ্গণে দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন, তিনি মনে হয় মেয়রের পক্ষে তদবিরে নেমেছেন। তবে তিনি সাংবাদিক ও উৎসুক জনতাকে সাফ জানিয়ে দেন, পিপির সঙ্গে এমনিতে দেখা করতে তিনি নারী ও শিশু আদালতে গিয়েছিলেন। এর সঙ্গে মামলার কোনো সম্পর্ক নেই।

অবশ্য আদালত প্রাঙ্গণে শিশুদের সঙ্গে মেয়রের আচরণ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য সংবাদকর্মীদের টক শোর আদলে বলেন, ‘শাসন ও আদর না থাকলে সভ্যতা গড়ে ওঠে না। কিছু কিছু বিষয় আছে শাসনের আওতায় পড়ে, আবার কিছু বিষয় আছে শোষণ।’

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মারধর বন্ধে সরকারের কড়া নির্দেশনা থাকলেও তা বন্ধ হয়নি। ৬ ফেব্রুয়ারির আরেক ঘটনায় স্কুলশিক্ষকের মারধরে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় এক শিক্ষার্থীকে। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি এলাকার গিরিকলি কিন্ডারগার্টেন ও পাবলিক স্কুলের ওই ঘটনায় পুলিশ জানায়, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক, প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের রাতে থানায় ডেকে বিস্তারিত জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আহত শিক্ষার্থী এমরান হোসেন এসএসসি পরীক্ষার্থী (ব্যবসায় শাখা) জানায়, ‘স্কুলের পেছনে কে কারা পটকা ফুটিয়েছে। এ ঘটনায় আমাকে ও আরেক ছাত্র শিশির মারমাকে সন্দেহ করে অফিসে ডেকে পাঠান সহকারী শিক্ষক মো. এমদাদ হোসেন।’

ওই আহত ছাত্র অভিযোগ করেন, ‘অফিসে যাওয়ামাত্র আমার শরীরে গরম চা ছুড়ে মারেন শিক্ষক। পরে চেয়ার থেকে উঠে আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় পরপর দুবার লাথি মারেন। এ সময় আমি পড়ে গিয়ে চিৎকার করলে বন্ধুরা এসে আমাকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।’

অবশ্য শিক্ষক বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁর দাবি, এমরানকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদকালে সে মারমুখী হয়ে তাঁকে আঘাতের চেষ্টা করলে তিনি কয়েকটি চড়–থাপ্পড় মারেন। এতে সে অভিনয় করে নাটকের সূত্রপাত ঘটায় এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়।

শিশু নির্যাতন যখন ‘উপভোগ্য’
শিশু নির্যাতন যে একটা ‘উপভোগ্য’ বিষয় এবং এই সমাজে যে এটা অনুমোদিত ‘বিনোদন’, সেটা নিয়ে কারও কি দ্বিমত আছে? গত বছরের ১৫ জুন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ২ নম্বর আমলসার ইউনিয়নের পশ্চিম আমলসার গ্রামে এক শিশুকে গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে নির্যাতনের দৃশ্য গ্রামের সবাই মিলে ‘উপভোগ’ করেছে।

শুধু তা–ই নয়, ঘটনাটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, নির্যাতনকারী ব্যক্তিটি শিশুটিকে বেদম পেটাচ্ছেন আর তার আশপাশে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ বসে আছেন। মাত্র ১০–১২ বছরের শিশু জীবন বিশ্বাসের আর্তচিৎকার যেন কারও কানেই ঢুকছে না। নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে কাউকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়নি।

নির্যাতনকারী নুর ইসলামকেও সংযত করতে কেউ কোনো চেষ্টাই করল না। জীবন বিশ্বাসের (১২) বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে টিয়া পাখি চুরি করেছে। কিন্তু ঘটনাটি কতটুকু সত্যি, এমন অভিযোগে কোনো শিশুকে এভাবে মারধর করা যায় কি না, একটিবারও কেউ সেই প্রশ্নটি তুলল না।

গত দুই–তিন বছরে প্রায় প্রতিদিনই এ রকম রোমহর্ষ ঘটনার ভুক্তভোগী হয়েছে শিশুরা। সব খবর পত্রিকার পাতা, নিউজ পোর্টাল বা টেলিভিশনের পর্দা পর্যন্ত যায় না। ভোলার লালমোহনের পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের পাঙ্গাশিয়া গ্রাম, নেত্রকোনার মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের রুদ্রশ্রী গ্রাম, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ ধুমাইটারী গ্রাম, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের বৃন্দাবন খিল এলাকা, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সিধূলী গ্রাম—এমন কত জায়গার নাম লিখব? কোথাও বেঁধে উল্টো করে পায়ের তালুতে পেটানো হয়েছে, কোথাও সারা রাত ঘরে আবদ্ধ করে রেখে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছে, কোথাও পায়ের নখ তুলে নেওয়া হয়েছে।

মারধরের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সর্বত্র মাথার চুল বিশ্রীভাবে কেটে দেওয়া হয়। কোথাও আবার মারধরের পর শিশুর অভিভাবকদের ডেকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জমি বিক্রির চুক্তিনামা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে সালিসের নামে এমন একটি ঘটনায় প্রভাব খাটিয়ে মীমাংসার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

কী করা যায়
আড়াইহাজার, মানিকছড়ি, শ্রীপুর, লালমোহন, মদন, সুন্দরগঞ্জ, চকরিয়ায়, নালিতাবাড়ী—এগুলো কেবলই ভিন্ন ভিন্ন এলাকার নাম। শিশুদের প্রতি বিশেষ করে প্রান্তিক শিশুদের প্রতি স্থানভেদে আচরণে কোনো ভিন্নতা নেই। সবাই একইভাবে নির্দয় নৃশংস আচরণের শিকার। সমাজ, পরিবার, থানা-পুলিশ, শিক্ষক—কেউই তাদের সুরক্ষা দিতে পারছেন না বা দিচ্ছেন না। শিশুদের সুরক্ষায় শিশু আইনে জেলা–উপজেলায় ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার বোর্ড ‘গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল। ব্যস, ওই পর্যন্ত। কাজ আর এগোয়নি।

আসলে আমাদের দরকার ইউনিয়ন পর্যন্ত শিকড়ওয়ালা একটা শিশুবান্ধব প্রতিষ্ঠান। হামলা–মামলার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যেন সেই শিশুবান্ধব প্রতিষ্ঠানটির ওপর ক্ষমতার ছড়ি ঘোরাতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুমনস্ক পেশাদার ব্যক্তিদের দিয়ে পরিচালিত সেই স্বপ্নের সংস্থাটি রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সংস্থাটি শুধু শিশুদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে না, শিশুদের প্রতি ন্যায্য আচরণে সমাজ ও রাষ্ট্রকে উৎসাহিত করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *