অন্যান্য বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি, শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে

পরিস্থিতি প্রতিবেদন- ২০ ১০ জুলাই ২০২৩

সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে দেশে ৬০ জেলার মধ্যে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এইবছরে এখন পর্যন্ত (০৯ জুলাই ২০২৩) সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১২,৯৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং নিহত হয়েছেন ৭৩ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে একদিনে সর্বচ্চ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে (০৯ জুলাই ২০২৩)। দৈনিক পত্রিকা যুগান্তরের তথ্য অনুযায়ী এই ছয়জনের মধ্যে ৫ জনই নারী।

ডেঙ্গু রোগের নতুন লক্ষণ
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হসপিতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ডাক্তার নাসিফ আনোয়ারে তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ডেঙ্গু রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া এর সাথে মাড়ি বা প্রসাবের সাথে রক্তপাত হওয়া। এসবের সাথে জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।

ডেঙ্গুতে শিশু আক্রান্তে হার অন্যতম দুশিন্তার কারণ
সব বয়সী মানুষের জন্য আতঙ্কের হলেও শিশুদের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক করে ফেলছে ডেঙ্গু। ইতিমধ্যেই নানাবয়সের ২৪ জন শিশু মারা গেছে।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর চার ভাগের এক ভাগই শিশু। শিশুদের অবস্থা দ্রুত অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৮০ শতাংশেরই মৃত্যু হচ্ছে।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে ডেঙ্গু রোগের প্রভাব শিশুদের ওপর সবসময় ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা থাকে কারণ শিশুরা সাধারণত তাদের শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন বা সতর্ক থাকে না। আর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ শিশুদের ডেঙ্গু হলে তাদের অসুবিধার কথা প্রায়ই জানাতে পারে না। ডেঙ্গু হলে রক্তের প্লেটলেটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, যা শিশুদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। শিশুদের শরীরে সাধারণত ১৫০০০০ থেকে ৪০০০০০ প্লেটলেট থাকে। এই সংখ্যা কমে গেলে শিশুদের শরীরে নানা ঝুঁকি তৈরি হয়। আর ডেঙ্গুর দ্বিতীয় প্রবণতা প্রথমটির চেয়ে বেশি জটিল যার ফলে প্রায়শই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম হয় যা শিশুদের জন্য অত্যন্ত মারাত্মক।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে অন্যতম করণীয়
এই পরিস্থিতিতে এই মুহুর্তে অন্যতম করনীয় হলো জ্বর হলেই ডাক্তারের পরামর্শে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা। অন্যদিকে শিশুদের যেন ডেঙ্গু না হয় সে বিষয়ে স্কুল ও বাড়িতে বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে মশারি ব্যবহারে অবহেলা না করা। শিশুদের ফুল হাতা জামা, কাপড় পড়ানো এবং ঘর, স্কুল, খেলার মাঠ এবং আশেপাশের এলাকা নিয়মিত পরিস্কার করা।
জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, ডেঙ্গু নির্মূল করা কষ্টসাধ্য কিন্তু অসম্ভব নয়। কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে দেশে ডেঙ্গুর একাধিক ধরন ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি মশকনিধনে সিটি করপোরেশনের সক্রিয়তা আরও বাড়ানো। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারিভাবে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা, যাতে মানুষ সচেতন হয়।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবং ডেঙ্গু হলে করনীয় এবং ডেঙ্গুতে শিশু সুরক্ষা সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন….

ডেঙ্গুতে শিশু সুরক্ষা
দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, কোভিডের সংক্রমনও বাড়ছে: আতংক নয় প্রয়োজন সতর্কতা

Leave a Reply