চলতি বছরের দুর্যোগ-দুর্ঘটনা নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন গওহার নঈম ওয়ারা (প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২)
চলতি বছর দেশে এমন দুর্যোগ–দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা অতীতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে সিলেটের বন্যা, করতোয়ায় নৌকাডুবি, সীতাকুণ্ডে ডিপোতে বিস্ফোরণ অন্যতম।
আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনেক এগিয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী বিস্তৃত হয়েছে। আমাদের বিস্তর নীতিমালা, কৌশলপত্র, পরিকল্পনা, আদেশাবলি তৈরি হয়েছে। বিশ্বসভায় দেখানোর মতো আমাদের নথিপত্রের অভাব নেই। তবে এসব নথির মর্ম বুঝে পদক্ষেপ নেওয়ার মানুষের ঘাটতি অনুভূত হয় বারবার।
চলন্ত লঞ্চে আগুন থেকে বাঁচতে মানুষের আর্তনাদ আর চিৎকারে গত বছর শেষ হয়েছিল। তাঁদের স্বজনদের কান্না এখনো থামেনি। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০–এর ইঞ্জিন থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ওই লঞ্চে কমপক্ষে ৩০০, মতান্তরে ৫০০ যাত্রী ছিলেন। সব মিলিয়ে আগুনে পুড়ে আর পানিতে ডুবে ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এ ঘটনার পর জাপানে বসবাসরত এক বাংলাদেশি জানিয়েছিলেন, ইয়াহুর জাপানিজ নিউজ পোর্টালে এই খবরটা প্রকাশিত হলে একটি মাত্র মন্তব্য পড়ে। সেই জাপানি পাঠক তাঁর ভাষায় যা লিখেছিলেন, তার অর্থ এ রকম—‘এটা তাদের জাতীয় চরিত্র বলেই মনে হয়।’ প্রবাসী বাংলাদেশি লেখেন, ‘মনে বেশ কষ্ট পেলাম, কিন্তু সত্যটাও মেনে নিতে বাধ্য হলাম।’s by
এই বাংলাদেশির কষ্ট পাওয়ারই কথা। গত এক বছরে দোষীদের শাস্তি দূরে থাক, আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া মানুষের ডিএনএ পরীক্ষার ফল এখনো মেলেনি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তথ্যমতে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের জন্য ৫১ স্বজন ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। এক বছরেও শেষ হয়নি ডিএনএ পরীক্ষা।
সেই লঞ্চ দুর্ঘটনার দগদগে স্মৃতি নিয়ে শুরু হয় ২০২২ সাল। এ বছর ছিল আরও বেশি দুর্যোগ–দুর্ঘটনা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সিলেট অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা, সীতাকুণ্ডে ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়ায় নৌকাডুবি, রাজধানীর উত্তরায় গার্ডারধস, ঘূর্ণিঝড় অশনি ও সিত্রাং ইত্যাদি। এর বাইরে নদীভাঙন, ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, গবাদি প্রাণীর মড়ক, সড়ক দুর্ঘটনা, বজ্রপাত, সাপের কামড়ে মৃত্যু ইত্যাদি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
সিলেট অঞ্চলের বন্যা
সিলেট অঞ্চলের মানুষ এমন বন্যা আগে দেখেনি। আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে যারা বিজ্ঞাপনের ভাষায় ভাষণ দেন, তাদেরও এমন বিধ্বংসী বন্যার কোনো ‘স্মৃতি’ জানা নেই। বানভাসি মানুষ যখন ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে এক কাপড়ে ছুটছিলেন, তখন তাঁরা ভাবতে পারেননি, ঘরে ফেরা সহজ হবে না। মুঠোফোন বন্ধ হয়ে যাবে। কবরের আঁধারে ঢেকে যাবে শহর–জনপদ।
বানের পানি সিলেট অঞ্চল থেকে নামা শুরু হলে ২৫ জুলাই ত্রাণ মন্ত্রণালয় বন্যার একটি অভূতপূর্ব ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে। ওই দিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সভা শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলা হয়, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে টানা ভারী বৃষ্টি হয়। এ ছাড়া উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরায় কয়েক দিন টানা ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এতে সিলেটের সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং সিলেট, সুনামগঞ্জ ও আশপাশের জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বন্যায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলেন, বন্যায় ১২ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৮৮০ জন। আশ্রিত মানুষের সংখ্যা ৭২ লাখ ৮১ হাজার ২০৪। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৬। তবে বেসরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ৭২ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অন্যরা বজ্রপাত, নৌকাডুবি ও সাপের কামড়ে মারা গেছেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, বন্যায় সারা দেশে ফসল, ঘরবাড়ি, অবকাঠামো মিলিয়ে প্রায় ৮৬ হাজার ৮১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭২ টাকার সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
ত্রাণ তৎপরতা
ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগে ২১ জুলাই পর্যন্ত বিপন্ন মানুষের মধ্যে ৭ হাজার ২০ মেট্রিক টন চাল, ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, এক লাখ ৪০ হাজার ১৩২ প্যাকেট বা বস্তা শুকনা ও অন্যান্য খাবার বিতরণ করা হয়েছিল। সে সময় ‘শিশুখাদ্য’ কেনার জন্য ৪০ লাখ টাকা এবং গোখাদ্যের জন্য ৪০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। বাস্তুচ্যুত মানুষের ঘরবাড়ি নির্মাণে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা নগদ আর ৮ হাজার ৭০০ বান্ডিল ঢেউটিন দেওয়া হয়।
যেসব প্রশ্ন অনুচ্চারিত থেকে গেল
কেউ প্রশ্ন করেনি, কম সময়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কথা জানার পরও কেন ঝুঁকিপূর্ণ জনপদের মানুষকে সঠিকভাবে সতর্ক করা গেল না? কেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা চলাচলের জন্য নৌকা জোগাড় করতে পারলেন না? কেন ২০২২ সালে এসে বাতিল প্রক্রিয়ায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলতে হলো আর ত্রাণের আঘাতে পানিতে ভাসতে থাকা মানুষ হতাহত হলেন? কেন মানুষের চাহিদা নিরূপণ ছাড়াই সপ্তাহের পর সপ্তাহ শুকনা খাবার দেওয়া হলো? আমরা কেন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো রক্ষার ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলাম।
স্থানীয় উদ্যোগ, নতুন উদ্ভাবন, জনতহবিল
সিলেট অঞ্চলে বন্যা মোকাবিলায় অনেক হতাশা থাকলেও মানুষ নানাভাবে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সিটি মেয়র প্রটোকল আর ডাকের অপেক্ষায় বসে না থেকে ছুটে গেছেন বন্যাকবলিত এলাকায়, চেষ্টা করেছেন প্রায় বন্ধ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সচল রাখার। ট্রাকের ওপর করপোরেশনের জেনারেটর বসিয়ে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছেন। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সিলেট শহরকে পুরোপুরি আঁধারে ঢেকে যেতে দেননি।
ব্যক্তিগত উদ্যোগ, বন্ধুবান্ধব মিলে বা সাংগঠনিক পর্যায়ে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন অগণিত মানুষ। কেউ রাস্তায় নেমে, কেউবা অনলাইনে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনেকে খাদ্যপণ্য কিনে দুর্গত মানুষকে পৌঁছে দিয়েছেন। নৌকামালিকেরা পরিবহন সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। ভয়াবহ এই দুর্যোগে বেসরকারি সাহায্য সংস্থার চেয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগ, সামাজিকমাধ্যমে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রচেষ্টা ও সাংগঠনিক পর্যায়ে উদ্যোগ বেশি দেখা গেছে।
ত্রাণ হিসেবে কাঁঠাল
এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ত্রাণ হিসেবে কাঁঠাল দেওয়া হয়, যা একটি নতুন ঘটনা। গাজীপুরের এক সংসদ সদস্যের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত একটি উপজেলায় ১০ ট্রাক কাঁঠাল পাঠানো হয়। ত্রাণসামগ্রীতে এমন ফল থাকলে তা মানুষ খেতে পারে, আবার গবাদিপশুকেও খাওয়াতে পারে। এমন উদ্ভাবনী উদ্যোগ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সব সফল উদ্যোগের রেকর্ড রাখা দরকার। দরকার আমাদের ‘আলমারিতে রাখা’ আদেশাবলির মূল্যায়ন। কেন এত বিধিমালা, আইনকানুন থাকার পরেও আমাদের অপ্রস্তুতিটাই প্রকট হয়ে উঠল।
ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত
৭ মে থেকে ১২ মে পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ সক্রিয় ছিল। বছরের প্রথম এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেক জায়গায় কেটে রাখা ফসল পানিতে ভেসে যায়। বরগুনা, ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলাসহ অনেক জেলায় বোরো ধান ও রবি ফসলের খেত তলিয়ে যায়।
বছরের দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হানে অক্টোবরে। ঘূর্ণিঝড় মোরার (২০১৭) পর এটিই ছিল সরাসরি দেশের ভূখণ্ডে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়। উপকূলের ১৫টি জেলার নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়ে। এই ঝড়ে সরকারি হিসাবে ৯ জন ও বেসরকারি হিসাবে ৩২ জন প্রাণ হারায়। ঘূর্ণিঝড়ে ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাছের প্রায় ১ হাজার ঘেরের ক্ষতি হয়।
উত্তরায় গার্ডারধস
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের দিনে রাজধানীর উত্তরায় ঘটে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের ক্রেন থেকে ফসকে একটি গার্ডার এসে পড়ে চলন্ত প্রাইভেট কারের ওপর। এতে শিশুসহ গাড়ির পাঁচ আরোহীর মৃত্যু হয়। ব্যস্ত সড়কে এভাবে মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে কাজ করায় অনেক বিশেষজ্ঞ একে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলছেন। নির্মাণকাজের সময় ব্যস্ত সড়কে কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল না। এমনকি দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কোনো পূর্বপ্রস্তুতিও ছিল না।
এটি ছিল দেশের ১১তম গার্ডারধস। এ রকম প্রতিটি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার আগে আগাম সতর্কবার্তা এসেছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেই সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দেননি। ১৫ আগস্টের দুর্ঘটনার আগেও সতর্কবার্তা ছিল। আগের মাসে (১৫ জুলাই) গাজীপুর মহানগরের চৌধুরীবাড়ি এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার গাড়িতে করে নেওয়ার সময় দুর্ঘটনায় এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়।
আমরা মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে দুর্যোগের বিচার করি। কম মরলে হালকা দুর্যোগ—এই মানসিক চিন্তা ক্রমেই আমাদের জন্য কাল হয়ে উঠছে। এসব বড় বড় প্রকল্প এমন অযোগ্য ও অদক্ষ কর্মকর্তারা চালাচ্ছেন, দেখে মনে হয় যেন ছাগল দিয়ে হালচাষের উৎসব চলছে।
সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপো
গত ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেই দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ ৫১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রায় দুই শ মানুষ দগ্ধ হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে ৬৩ জনের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ঘটনায় এত মানুষের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।
দুর্ঘটনার পর ডিপোর সব কার্যক্রম চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ধ করে দিলেও গত ২৪ নভেম্বর থেকে আবার কার্যক্রম চালুর অনুমতি পায় ডিপো কর্তৃপক্ষ। ১৭ দিনের মাথায় ১৩ ডিসেম্বর আবার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এবার ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় আগুন নেভানো হয়। যে নয়টি শর্তে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছিল কাস্টমস, তার অন্যতম ছিল আগুন নিয়ন্ত্রণে নিজস্ব ফায়ার ইউনিট রাখা, কেমিক্যাল পণ্যের জন্য আলাদা শেড নির্মাণ ইত্যাদি। কিন্তু সেসব শর্ত পূরণ না করেই ডিপো চালু করা হয়।
করতোয়া ট্র্যাজেডি
গত ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বধেশ্বর মন্দিরে নৌকা করে যাচ্ছিলেন পুণ্যার্থীরা। করতোয়া নদীতে ঘাটের কাছেই নৌকাটি ডুবে যায়। মহালয়ার দিনেই বিসর্জন হয়ে যায় নারী–শিশুসহ প্রায় শ খানেক মানুষের প্রাণ। ৭১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর ৯ নভেম্বর দুপুরে ভূপেন্দ্র নাথ বর্মণ (৪২) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ৪৭ দিন পর জয়া রানী (৪) নামের আরেকটি শিশুর গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এখনো অনেকেই নিখোঁজ স্বজনের মরদেহের অপেক্ষায় নদীর দিকে তাকিয়ে থাকেন। এক নৌকাডুবিতে দেশে এত মানুষের প্রাণহানি আগে কখনো হয়নি।
ক্ষতি এড়াব কীভাবে
আলোচিত এসব আপদ–দুর্যোগে প্রাণহানি আর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো বা সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা সম্ভব ছিল। গাফলতি আর অবহেলা অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। প্রযুক্তির উন্নতি আমাদের সহযোগিতা করছে। দুনিয়াজুড়ে চলছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক করার চর্চা আর উদ্ভাবন। বাংলাদেশ সেসব বৈশ্বিক প্রস্তুতিতে শামিল হচ্ছে, বক্তব্য দিচ্ছে, নিজেকে পরিবর্তন করছে।
পরিবর্তন এসেছে দুর্যোগকে বিশ্লেষণের দৃষ্টিভঙ্গিতেও। দুর্যোগ মোকাবিলায় শক্তি বাড়ানোর কাজ ক্রমশ গুরুত্ব পাচ্ছে, বেগবান হচ্ছে। বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দুর্যোগ মোকাবিলা করে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সরকারের এখন অন্যতম লক্ষ্য। দারিদ্র্য হটানোসহ সামাজিক নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে, যদি সেটি আমরা মন থেকে চাই।