বঙ্গবাজার অগ্নিকান্ড নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন গওহার নঈম ওয়ারা (প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩)
মৃত্যুফাঁদের কোলের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস অফিস বসিয়ে রাখলেও এই বাহিনীর ‘কানা মাছি ভোঁ ভোঁ খেলা’ ছাড়া করার কিছুই থাকে না।
যে দুর্ঘটনা একই সমান্তরাল রেখায় বারবার ঘটতে থাকে, তাকে আর দুর্ঘটনা বলা যায় না। সেটা ঘটে কারও প্ররোচনায় অথবা অবহেলায় কিংবা প্রক্রিয়া বা পদ্ধতিগত কারণে। সব সক্ষমতা থাকার পরও কোথাও না কোথাও একটা ঘাটতি নিশ্চয় রয়েছে। সেই ঘাটতির ফুটো দিয়ে আগুন লাগছে বারবার।
রাজধানীর বঙ্গবাজারে ৪ এপ্রিল ভোরে লাগা ভয়াবহ আগুনে চারটি বিপণিবিতান পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। পুড়েছে আশপাশের আরও কয়েকটি বিপণিবিতানের দোকান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট দিনভর নিজ নিজ বুদ্ধিমতো কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
খবর পাওয়া গেছে যে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এই গুচ্ছ দোকানের ঘিঞ্জি সারিগুলোতে (যাকে আমরা বিপণিবিতান বলছি) সব মিলিয়ে দোকানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৭০। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে জামাকাপড় পুড়ে যাওয়ায় যেভাবে ব্যবসায়ীরা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তার প্রভাব পড়তে পারে ঈদকেন্দ্রিক পোশাকের ব্যবসায়ও।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ, সিদ্দিকবাজার, তাঁতিবাজার, বাংলাবাজার, বংশাল এবং অন্যান্য এলাকার অনেক স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্র হিসেবেও বঙ্গবাজারে অনেক দোকান ছিল। আগুন লাগার আগে তাদের অনেকেরই বিক্রির জন্য প্রস্তুতসামগ্রী সেখানে মজুত ছিল।
সেই হিসাবে এই আগুনের প্রভাব শুধু এই ২ হাজার ৩৭০ জন (মতান্তরে ২ হাজার ২০০) দোকানির নয়, আরও অনেকের। এই অনেকের মধ্যে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, তাদের মালামাল সরবরাহকারী, গায়ে গতরে খাটা শ্রমিক–কর্মচারীরাও রয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তদন্ত কমিটি গতকাল জানিয়েছে, বঙ্গবাজারের আগুনে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৮৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার।
‘ফায়ারস ওন্ট ডাই আউট দেমসেলভস’ (আগুন নিজে নিজে নেভে না), সে কি আপনা-আপনি জ্বলতে পারে—এসব বচন ও প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবার জানা। এরপরও আমরা আগুনের কাছে এত অসহায় কেন? অনেকে বলছেন, বঙ্গবাজারের আগুন অবশ্যম্ভাবী ছিল।
আজ হোক কাল হোক, দিনে হোক রাতে হোক, সেটা লাগতই। আগুন লাগার বা লাগানোর সব উপচার সেখানে উপচে পড়ছিল। প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক সারফুদ্দিন আহমেদ যথার্থ বলেছেন, ‘কৌরবদের আমি মারিয়াই রাখিয়াছি। অর্জুন নিমিত্তমাত্র।’
দিনে দিনে আগুন লাগার ঊর্ধ্বমুখী ঝুঁকির সঙ্গে তাল রেখে বাড়েনি আগুন প্রতিরোধের সক্ষমতা। আমাদের অজান্তে আগুন লাগানোর দায়িত্ব আমরা নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে আগুন নেভানোর দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছি ফায়ার সার্ভিস নামের প্রতিষ্ঠানকে। ফায়ার সার্ভিসের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা প্রাণ হারাচ্ছেন, পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছেন, আহত হয়ে কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে হাসপাতালে। এরপরও মানুষ তাঁদেরই দুষছে। আক্রান্ত হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস অফিস। আগুন নেভানোর গাড়ি। বঙ্গবাজারের সর্বনাশা আগুনের পর আবার ভিড়ের সেই ভিরমি খাওয়া আচরণ প্রকাশ পেয়েছে।
হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে। হয়তো জেল–জরিমানাও হবে। কিন্তু ভিড়ের এই আচরণ বন্ধ হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, এত কাছে ফায়ার সার্ভিস অফিস, তবু কেন সব পুড়ে শেষ হলো? পাল্টা প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন এত বিধ্বংসী আগুন লাগল। অনেকেই মনে করেন, আগুন না লাগাটাই ছিল অস্বাভাবিক। রাজধানীর অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকিপূর্ণ বিপণিবিতানের মধ্যে গুলিস্তানের বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি বিপণিবিতানকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হতো সব সময়। তবে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, সেখানে আগুন লাগার কোনো ঝুঁকি ছিল না। বিপণিবিতানটিতে অগ্নিনির্বাপণ–ব্যবস্থা ছিল।
অবশ্য বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন ভিন্ন কথা, বলেছেন, তাঁরা সব সময় ঝুঁকিতে ব্যবসা করেন। সবচেয়ে সস্তায় ‘ভাড়া’ করা কথিত নিরাপত্তাকর্মীদের (সিকিউরিটি গার্ড) আগুন নেভানোর কোনো প্রশিক্ষণ কি কেউ কখনো দিয়েছেন? তাঁরা কি জানতেন কীভাবে আগুন নেভানোর যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) ব্যবহার করতে হয়। কোথায় লেখা থাকে সেগুলোর মেয়াদকাল?
বঙ্গবাজারে ১৯৯৫ সালের পর সর্বশেষ বড় ধরনের আগুন লাগে ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বঙ্গবাজারের গুলিস্তান ইউনিটের সেই আগুনে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। তবে এবারের মতো সবটা শেষ হয়ে যায়নি। সব শেষ হওয়া ১৯৯৫ সালের আগুনে পুড়েছিল ৫২৫টি দোকান।
এবারের আগুনে পুড়েছে একই জায়গার মধ্যে গড়ে ওঠা ২ হাজার ৩৭০টি দোকান। শুধু এই সংখ্যা থেকেই আন্দাজ করা যায় যে আগুন নেভানোর কাজটা আমরা কত কঠিন করে ফেলেছি। ৫২৫টির জায়গায় ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা ২ হাজার ৩৭০টি দোকানের জন্য বঙ্গবাজারের পরিসর অপ্রতুল বলে এর ভেতরে দোকানের সারিগুলোও দিন দিন সরু থেকে সরুতর হয়েছে।
২০১৮ সালে বঙ্গবাজারে আগুনের সময় ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা করে সকাল ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন লাগার পর বিপণিবিতানটির কর্তৃপক্ষকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে দুই দফা নোটিশ দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের সেই আগুনের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দিতে ২০১৯ সালের মার্চ মাস এসে যায়। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, বারবার সতর্ক করার পরও বঙ্গবাজার কর্তৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক কমিটির নির্দেশনা মানেনি।
বিপণিবিতানটির অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকলেও কোথাও ধোঁয়া ও তাপ শনাক্তকরণের ব্যবস্থা (স্মোক ও হিট ডিটেক্টর), ফায়ার হোজরিল, পাম্প, ফায়ার অ্যালার্ম বা অন্য কোনো অগ্নিনির্বাপণ–ব্যবস্থা ছিল না। হতাশার সঙ্গে আশঙ্কা করা যায়, ২০২৩ সালের আগুনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে একই কথা থাকবে।
রাজধানী সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানের আগুন নেভানোর ব্যবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে গত রোববার প্রকারান্তরে এই কথাগুলোই আবার বলেছেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা সদর জোন-১–এর উপসহকারী পরিচালক বজলুর রশিদ। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ১০ মিনিটেই পুরো বিপণিবিতানে আগুন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। অল্প কিছু ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছাড়া আগুন নেভানোর জন্য আর কিছু নেই বিপণিবিতানগুলোতে। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক সংযোগের অপরিকল্পিত বিন্যাস ও কথিত সাময়িক সংযোগগুলো বিপণিবিতানগুলোর ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ঢাকা শহরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিপণিবিতানগুলোর মধ্যে ঠাটারীবাজারের একটি ‘মার্কেট’, রাজধানী সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, চকবাজার মার্কেট অন্যতম। তাঁর দৃষ্টিতে ঢাকার বেশির ভাগ মার্কেটই ঝুঁকিপূর্ণ।
মোদ্দা কথা হলো, বঙ্গবাজার থেকে শুরু করে আধুনিক কারওয়ান বাজারের বাণিজ্যিক জঙ্গল, টেলিভিশন চ্যানেল পাড়া, অত্যাধুনিক ‘শপিং মল’—কোথাও আগুন নিয়ে মালিকপক্ষের কি ভাড়াটেদের, কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সব কটিই ব্যবহারকারীদের, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এ রকম মৃত্যুফাঁদের কোলের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস অফিস বসিয়ে রাখলেও তাদের ‘কানা মাছি ভোঁ ভোঁ খেলা’ ছাড়া করার কিছুই থাকে না।
সমন্বিত মহড়ার বিকল্প নেই
এবারের আগুনে প্রায় সব বাহিনী অংশ নিয়েছে। তবে দরকার ছিল সমন্বিত পূর্বপরিকল্পনা ও বোঝাপড়া।
কে থাকবে নেতৃত্বে (কমান্ডে)? কার কথায় চলবে কার্যক্রম (অপারেশন), পরিচালিত হবে আগুন নেভানোর ছক? পানি আনতে আকাশে উড়ব না আশপাশের মসজিদ, ছাত্রাবাস, অফিস আর হোটেলের ট্যাংকগুলো ইস্তেমাল করব—এসব সিদ্ধান্ত কে নেবে, তা আগে থেকে ঠিক করতে হবে। ভিড় কে কীভাবে সামলাবে বা ভিড়কে কীভাবে কাজে লাগানো যাবে, সেটা নিয়েও আমাদের এখন পর্যন্ত কোনো বুদ্ধিমান চিন্তা ডানা মেলতে পারেনি।
মানুষের ভিড়কে দোষারোপ করে অনেকে বক্তৃতা–বিবৃতি দিয়েছেন। খেয়াল করেননি আমাদের অবহেলায় বেড়ে ওঠা পথশিশুদের অনেকেই দর্শক হয়ে বসে না থেকে ছোট হাতগুলো কাজে লাগিয়েছে কারও আদেশের তোয়াক্কা না করে। ঢাকার বনানীর আগুন, বঙ্গবাজারের আগুন—সবখানেই তারা প্রস্তুত ছিল। এ ধরনের দুর্যোগে সাধারণ মানুষকে কাজে লাগানোর তরিকা আমাদের জানা থাকলেও আমরা সেটা আমল করি না। জনবিচ্ছিন্ন আমলা কালচারের (সংস্কৃতি) সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে জনগণকে বাইরে বসিয়ে রাখার রাজনৈতিক কালচার।
দোকান যাঁর, বাড়ি যাঁর—আগুন নেভানোর প্রাথমিক দায়িত্ব তাঁর; ফায়ার সার্ভিস সে কাজটা কখনই করতে পারবে না। আজ যদি বঙ্গবাজারে ‘অগ্নিপ্রতিরোধ’ কমিটি থাকত, দোকানকর্মী আর মালিকদের সমন্বয়ে সে সব কমিটি যদি তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করার সুযোগ পেত, তাহলে আগুন হয়তো লাগতই না। আর লাগলেও কাকপক্ষী টের পাওয়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণে চলে যেত।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ বা অগ্নিনির্বাপণ ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষের ভাষায় এসব কমিটিকে বেসামরিক প্রতিরক্ষা দল বলে। এলাকাভিত্তিক খানা বা লোকসংখ্যা অনুযায়ী বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলকে ১০-১২ জনের ছোট ছোট দল বা ওয়ার্ডেন পোস্টে বিভক্ত করা হয়।
আজ প্রতি ১০০ দোকান পিছু ১০ জনের একেকটা প্রশিক্ষিত দল থাকলে কমবেশি ৩০০ জনের একটা সুশিক্ষিত কর্মী দল ফায়ার সার্ভিসের সহায়কের ভূমিকা পালন করতে পারত। ভিড় ঠেকানো, চুরি বন্ধ, উৎস থেকে নিয়ে আসা পানির পাইপের সংযোগগুলো সুরক্ষা ইত্যাদি কাজে তাঁরা ভূমিকা রাখতে পারতেন।
অনেক আগে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের ম্যানুয়াল মেনেই ঢাকার মিরপুর এলাকায় এ রকমের একটা বেসামরিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল। অনেক সফলতার সাক্ষী হয়েছিল সেই কার্যক্রম। মিরপুরের সেই অভিজ্ঞতা সারা দেশে কেন আমরা ছড়িয়ে দিচ্ছি না?
ঢাকার বাইরেও ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে
প্রতিদিনের খবরের কাগজে আর টেলিভিশনে জেলা–উপজেলায় আগুন লাগার খবর আমাদের দেখতে হয়। সারা দেশের কথা বাদ দিয়ে শুধু একটা উপজেলার হিসাব দেখলে পরিস্থিতির তাপটা বোঝা যাবে। ফায়ার সার্ভিসের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে গত দেড় মাসে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
মনাকষার পারচৌকা রাঘবাটি, দুর্লভপুরের আটরশিয়া, পিয়ালীমারী, বিনোদপুরের কালিগঞ্জ, মোবারকপুরের সাহেবগ্রাম, গোয়বাড়ি চাঁদপুর, চককীর্তির রানীবাড়ি, চাঁদপুরসহ ৩৮টি গ্রামে আগুন লাগে। এক আগুনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ শেষ করার আগেই আরও আগুনের খবর আসে ফায়ার সার্ভিস অফিসে।
এ রকম ছবি কমবেশি দেশের সর্বত্র। খুলনা বিভাগের প্রকাশিত এক হিসাব অনুযায়ী, সেখানে গত এক বছরে ২ হাজার ৩৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫টির বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ফায়ার সার্ভিসের প্রয়োজন হয়েছে। ওই বিভাগে এসব ঘটনায় কমপক্ষে ২৬৫ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।
জনবল ও সরঞ্জামের ঘাটতি সর্বত্র
ঢাকার কাছেই বড় শহর কুমিল্লা। সেখানে এখন দশতলা ভবনের অভাব নেই। কিন্তু যে মই আছে, তাতে সাততলার ওপরে ওঠা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পক্ষে সম্ভব হবে না বলে গণমাধ্যমের খবর। তা ছাড়া জেলায় ফায়ার সার্ভিসে প্রায় ১৫০ জন কর্মীর ঘাটতি এখনো চলছে (পদের তুলনায়)। সবচেয়ে বেশি কর্মিসংকট আছে শহরের ফায়ার স্টেশনে। আবার বর্ষা এলেই স্টেশনটি পানিতে ডুবে যায়। কুমিল্লা শহরের বাসিন্দারা মনে করেন, কুমিল্লায় আগুন লাগলে সেটা বঙ্গবাজারকে হার মানানোর আশঙ্কা থাকে।
খুলনা বিভাগে সাজসরঞ্জামের অপ্রতুলতার কথা বাদ দিলে পদের তুলনায় জনবলের ঘাটতি আছে প্রায় ২২৩ জনের। স্টেশন অফিসারের ৬৪টি পদের মধ্যে ৪৭টিই খালি। ১১ জন ফায়ার অফিসারের জায়গায় আছেন মাত্র ৪ জন। ফায়ার ফাইটার পদে ১২৬ জনের ঘাটতি নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে।
আমাদের দেশে এসব ঘাটতি বিচিত্র কিছু নয়। জনবলের একটা বড় ঘাটতি পূরণ করা যায় সমাজভিত্তিক আগুন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে। সমাজভিত্তিক আগুন নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা দেশকে অগ্নিদুর্ঘটনা সচেতন সমাজ গড়তেও সাহায্য করবে।