পরিস্থিতি প্রতিবেদন-১৩ ১৫ মে ২০২৩
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে বাংলাদেশে কোনো নিহত এবং নিখোঁজের ঘটনা ঘটেনি তবে সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, কক্সবাজার জেলা ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে।
গত ১৪ মে ২০২৩ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মিয়ানমার এবং বাংলাদেশে সরাসরি আঘাত হানে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি মূলত আঘাত হেনেছে মিয়ানমারে। কিন্তু এর কেন্দ্রের বাঁ দিক বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ওপর দিয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রমতে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় সেন্ট মার্টিনে বাতাসের সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার ছিল। টেকনাফে বাতাসের গতি সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমানের তথ্য অনুযায়ী সাগরে অবস্থানকালে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠেছিল। সাগর থেকে মাটিতে এসে মোখা অনেকটা দুর্বল হয়ে যায় এতে বাংলাদেশের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
আজ ১৫ মে ২০২৩ পর্যন্ত দৈনিক পত্রিকার সূত্র অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এর কারণে বাংলাদেশে কোনো নিহত এবং নিখোঁজের ঘটনা ঘটেনি। তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬২০ জন মানুষ বির্পযস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ২ হাজার ২২ টি ঘরবাড়ি (ঝুপড়ি) সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ১০ হাজার ৪৬৯টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের তথ্য অনুযায়ি ঘূর্ণিঝড়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন দ্বীপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শুধু সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১ হাজার ২০০টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে এবং ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছেন এর মধ্যে গাছের ডালভেঙে মাথায় পড়ার কারণে একজন নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও বাসিন্দাদের প্রাথমিক তথ্য হলো, বিভিন্ন জায়গায় গাছ উপড়ে গেছে, ডালপালা ভেঙে পড়েছে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের সাবরাং ইউনিয়নের প্রায় ছয় শতাধিক ঘরবাড়ির মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে চার শতাধিক ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেকগুলো ঘর ভেঙে গেছে। অন্যদিকে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দৌজা তথ্যমতে ঘূর্ণিঝড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি তবে রোহিঙ্গা শিবিরে ২ হাজার ৫৪৮টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৭ জন রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন। এছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের ৩২টি শিক্ষাকেন্দ্র (লার্নিং সেন্টার), ২৯টি মসজিদ ও মক্তব এবং ২০টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি মূলত আঘাত হানে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মিয়ানমার প্রশাসন এ পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে [সর্বশেষ তথ্যঃ দৈনিক পত্রিকার আজকের(১৭ মে ২০২৩) তথ্য অনুযায়ী মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন ]এপিনিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ১২ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। সোমবার (১৫ মে) মিয়ানমার আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়, প্রবল বাতাসে টেলিযোগাযোগ টাওয়ার, বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছপালা উপড়ে পড়েছে। তাছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং ইন্টারনেট পরিষেবা ও বন্ধ রয়েছে। রোববার (১৪ মে) বিকেলে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়েতে আঘাত হানে ‘মোখা’। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫৯ কিলোমিটার। যা ক্যাটাগরি ফাইভ হারিকেনের সমতুল্য। দেশটির আবহাওয়াবিদদের মতে, গত ১৩ বছরের মধ্যে মিয়ানমারের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়। ২০১০ সালে সাইক্লোন ‘গিরি’র তাণ্ডবে ৪৫ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।
তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, দৈনিক সমকাল, দৈনিক ইত্তেফাক।
ছবিসূত্র: প্রথম আলো।