ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ সর্বশেষ পরিস্থিতি

ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ কেটে গেলেও ঝড়ের ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জেলাসমূহ। কোনো কোনো এলাকায় এখনও জোয়ারের পানি নামেনি। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে রেমালে বিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দারা। অনেকেই বিধ্বস্ত হওয়া বাড়িঘর মেরামত করতে পারেননি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা।

ক্ষয়ক্ষতি তালিকা এখনো পুরোপুরি পাওয়া না গেলেও যে তথ্যসমূহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমে আসছে তাতে স্পষ্ট এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে উপকূলবাসীর।

এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির যে তথ্য উঠে এসেছে তা নিচে দেওয়া হলো:

ক্ষয়ক্ষতি

মৃত্যু: ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর আঘাতে এখন পর্যন্ত ৩৭ জন নিহত হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। এরমধ্য ছেলে শিশু ৩ জন, মেয়ে শিশু ২, ৬ জন নারী এবং ২৬ জন পুরুষ । বেশীরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে গাছ চাপায়, দেয়াল ধসে এবং বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে।

সরকারের প্রাথমিক মতে মূল্যায়ন (এসওএস ফর্ম) ১৯ টি জেলায় (১০৭টি উপ-জেলা, ৯১৪টি ইউনিয়ন)৩.৭৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রায় ১৫০,৪৭৫টি বাড়ি রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (১১৪,৯৯২আংশিক এবং ৩৫,৪৩৩ সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত)।

পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা এবং বরিশাল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । জলোচ্ছ্বাস বাঁধ ভেঙ্গে বন্যা হয় এতে ঘরবাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি নিচু এলাকায় কৃষিক্ষেত্র এবং মাছ ধরার খামার ডুবে যায়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী ৫০,০০০ মাছের ঘের, ৩৪,০০০ পুকুর, এবং ৪,০০০ কাঁকড়ার খামার ডুবে গেছে।

২৪ মে পর্যন্ত, আনুমানিক ১৭ লক্ষ মানুষ বিদ্যুৎ বিহীন ছিল, এবং প্রায় ২০,০০০ মোবাইল টাওয়ার সারাদেশে বন্ধ ছিল।

আটটি জেলা (পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, খুলনা,বাগেরহাট, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, ভোলা) থেকে প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী ১৬,৫০০অকার্যকর পানির পয়েন্ট/টিউবওয়েল এবং ৩০,৩০১টি স্যানিটেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খুলনার বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী সুন্দরবনে বন বিভাগের ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের (খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা) এলাকায় জলোচ্ছ্বাসে ১৪টি পুকুরের পাড় ভেঙে গেছে। ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ গোলপাতার বাগান প্লাবিত হয়ে গেছে। সাগরের নোনা পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে বন্য প্রাণীর জন্য তৈরি করা মিঠা পানির পুকুর-সহ শতাধিক জলাশয়। মিহির কুমার জানান সুন্দরবনের ৮০টি মিঠা পানির উৎস পুকুরে ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে মৃত ৫১টি হরিণ এবং ১টি বন্য শুকর উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। এছাড়া পানিতে ভেসে যাওয়ার সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে জীবিত অবস্থায় ১৭টি হরিণ উদ্ধার করা হয় এবং এদের অবমুক্ত করা হয়।

ঘূর্ণিঝড় রেমাল সৃষ্ট বন্যা, পরিবহন প্রতিবন্ধকতা এবং বিলম্বিত চিকিৎসার কারণে গর্ভবতী নারীদের ভোগান্তি পৌহাঁতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় মাতৃস্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে প্রায় গোলচিপা উপজেলায় ৩০০জন এবং পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় ৪০০ জন ভোগান্তি ভুগছে ।

সর্বশেষ তথ্য: ২৯/০৫/২০২৪ তারিখে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের মতে,ক্ষতিগ্রস্থ ১৯টি জেলার অন্তত ৩.৭৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পাশাপাশি ১০০,০০০ এরও বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে এবং মোট ৩৫,৪৮৩টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং আরও ১১৪,৯৯২টি আংশিক ক্ষতি হয়েছে।

তথ্যসূত্র: https://reliefweb.int/report/bangladesh/bangladesh-cyclone-remal-2024-situation-report-no-03-29-may-2024

https://www.heraldmalaysia.com/news/cyclone-remal-devastates-lives-and-livelihoods-in-bangladesh/76251/4

ছবিসূত্র: প্রথম আলো

Leave a Reply