‘শিশুদের চোখে চশমা পরার হার বাড়ার‘ ঘটনা নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন গওহার নঈম ওয়ারা (প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪)
দেশে শিশু বয়সেই চোখে চশমা পরার হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। করোনা অতিমারির সময় অনলাইনে বিদ্যালয়ের ক্লাস, গেমস খেলাসহ নানা কাজে মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ডিভাইসের ব্যবহার শিশুর চোখের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এর বাইরে নানা ভিটামিনের অভাবে শিশুদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাচ্ছে, এমনকি অন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
কিছু লেখা বা প্রতিবেদন মনে এমনভাবে রেখাপাত করে যে, সেটা বিষয়, স্থান অথবা ঘটনার সমার্থক হয়ে যায়। চট করে মনে পড়ে যায় পুরোনো ঘটনা। সেই রকম কায়রোর কথা শুনলে পিরামিড নয়, আমার কেবলই মনে হতো ১৯৬৫ সালের ২০ মে ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কথা। পাকিস্তান এয়ারলাইনস খুব জাঁকজমকভাবে সেই উদ্বোধনী ফ্লাইট নিয়ে যাচ্ছিল লন্ডনে। কথা ছিল, করাচি থেকে সৌদি আরবের দাহরান হয়ে মিসরের কায়রো এবং তারপর সুইজারল্যান্ডের জেনেভা হয়ে লন্ডনে গিয়ে থামবে। উদ্বোধনী সেই ফ্লাইটে ১১৪ যাত্রীর মধ্যে বিশিষ্ট অতিথি ও সাংবাদিকেরা ছিলেন। তখনো পাকিস্তানের হিস্যা হিসেবে ঢাকার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকও ছিলেন সেই উড়োজাহাজের আমন্ত্রিত যাত্রী।
সেই ফ্লাইটের যাত্রীদের মধ্যে মাত্র ছয়জন অলৌকিকভাবে উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে ছিটকে বাইরে পড়ে বেঁচে যান। অনেকেই এটাকে ‘রহস্যজনক’ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা বলে থাকেন। কারণ, নিহতদের মধ্যে চীনা উড়োজাহাজের নকশাকার (ডিজাইনার) হুয়াং ঝিকিয়ান ছিলেন। তিনি ছিলেন ফাইটার জেট শেনইয়াং জে-৮-এর প্রধান নকশাকার। পরদিন তদানীন্তন সাপ্তাহিক পূর্বদেশ পত্রিকায় বিস্তারিত প্রতিবেদন ছাপা হয়। অবজারভার, মর্নিং নিউজ, পয়গাম, ইত্তেফাক ইত্যাদি পত্রিকায় নিহতদের পরিবারের আহাজারি এবং তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে তাঁদের বিদায় জানানোর ছবি ছাপা হয়। সেই প্রতিবেদন এতই মন ছুঁয়ে গিয়েছিল যে, মনের মধ্যে পিরামিডের চেয়ে উঁচু স্থান করে নেয় সেই দুর্ঘটনার কথাচিত্র।
তবে গত ১৭ ডিসেম্বর প্রায় শেষ রাতে কায়রোগামী উড়োজাহাজে ওঠার সময় অন্য একটি প্রতিবেদন আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। প্রতিবেদনটি ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোয়। ২০১৬ সালের ২০ মে শুক্রবারের আয়োজনে। (কাকতালীয়ভাবে দুটিই ২০ মের ঘটনা। শুধু সাল আর পটভূমি ভিন্ন। কিন্তু শঙ্কিত করে সমানে) শেখ সাবিহা আলমের সেই প্রতিবেদনে আমাদের শিশুরা মানে আমাদের ভবিষ্যৎ যে ক্রমেই অন্ধত্বের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, সে কথা বলা হয়েছিল।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সচ্ছল পিতা-মাতার সঙ্গে ছুটি কাটাতে কায়রো যাচ্ছে হাসিখুশি শিশুরা। কোলের শিশু থেকে ক্রিকেটে অভ্যস্ত শিশু আছে এই দলে। ৩০৫ যাত্রীর মধ্যে প্রায় ৪৭টি নানা বয়সের শিশু। একেবারে কোলের সাতটি শিশু বাদ দিলে ৪০ শিশুর মধ্যে ১৩ জনকে নিয়মিত চশমা ব্যবহার করতে হয়। অঙ্কের হিসাবে এই দলের প্রতি তিন শিশুর একজন চশমা ছাড়া ঝাপসা দেখে।
ইজিপ্ট এয়ারের উড়ান বিলম্বিত হওয়ায় শিশু আর তাঁদের আগ্রহী পিতা-মাতার সঙ্গে একটু খুচরা আলাপের সুযোগ পাওয়া গেল। শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সার্বক্ষণিক চশমা ব্যবহারকারী ১৩ শিশুর বাইরে খণ্ডকালীন ব্যবহারকারীর সংখ্যা কিছু কম নয়। আরও ১০ জন পাওয়া গেল, যাদের হাতব্যাগে চশমা আছে। আমাদের সময় (ষাটের দশকে) প্রাথমিকে কারও চশমা ছিল না। মাধ্যমিকে জেলা স্কুলে ক্লাস সিক্সে দুই সেকশন অর্থাৎ ১২০ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র দুজন চশমা পরত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত এই সংখ্যা আর বাড়েনি।
শিশুর চোখে কেন বাড়ছে চশমা
করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসার পর নানা দেশে শিশুদের ওপর এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ যাচাইমূলক কিছু গবেষণার কাজে হাত দেন। বোধ করি ঢাকার ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের একদল গবেষক ২০২১ সালে এমনই এক গবেষণা করেছিলেন। গবেষণার আওতায় তাঁরা ঢাকার ১৯টি বিদ্যালয়ের ৬ হাজার ৪০১ শিক্ষার্থীর চোখ পরীক্ষা করেন। ঢাকার বাইরে বরিশাল, জামালপুর ও নওগাঁর বিভিন্ন বিদ্যালয়ের আরও ২৬ হাজার ৩৪৭টি শিশুর চোখ পরীক্ষা করা হয়। ঢাকার জরিপে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীর চোখে ত্রুটি পাওয়া যায়। আর ঢাকার বাইরে এই হার ছিল ১৪ শতাংশ।
গবেষকেরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ডিজিটাল স্ক্রিনে (পর্দায়) চোখ থাকায় তাদের এই দশা! কোভিডে পড়াশোনা ছিল ল্যাপটপ, ট্যাবলেট আর মোবাইল ফোননির্ভর। তার প্রভাব পড়েছে দৃষ্টিশক্তিতে। এই তথ্য বা উপসংহার নতুন কিছু নয়। কোভিডের অনেক আগে ২০১৬ সালে প্রকাশিত শেখ সাবিহা আলমের প্রতিবেদনে একই কথা বলা হয়েছিল (স্ক্রিনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারণে শিশুরা চশমা ছাড়া দূরের জিনিস দেখতে পায় না)। বলছি না, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট আর মোবাইলের পর্দায় রাত-দিন তাকিয়ে থাকার আঁচড় চোখের ওপর পড়ে না। অবশ্যই পড়ে। তবে শিশুদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের এটাই একমাত্র কারণ নয়।
পৃথিবীর বহু দেশে বিদ্যালয়ে এক থেকে দুই ঘণ্টা বাইরে ঘোরাফেরা ও খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশেও এই পদ্ধতি চালুর চেষ্টা চলছে। আপনার শিশুকে দৈনিক এক ঘণ্টা দিনের আলোতে বাইরে সময় করে দিন। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঠ আছে, সেখানে ভর্তি করান। বিদ্যালয়ে এক ঘণ্টা বিরতির যেন ব্যবস্থা করা হয়, সে জন্য আওয়াজ তুলুন।
আমেরিকার ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস’-এর তথ্যমতে, শরীরে ভিটামিন, খনিজ পদার্থের মতো পুষ্টিকর উপাদানের অভাব ঘটলে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিটামিন ‘এ’ ও বি১২-এর ঘাটতি দৃষ্টিশক্তিকে ক্ষীণ করে ফেলতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশেষ করে ভিটামিন ‘এ’ পর্যাপ্ত না থাকলে কর্নিয়া শুকিয়ে যেতে পারে। এতে ঝুঁকি বাড়ে অন্ধত্বের। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে এই ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। সারা বিশ্বে প্রায় প্রতিবছর ২৫ লাখ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে ভোগে। একইভাবে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতিও দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের অন্যতম কারণ।
কায়রোগামী যাত্রী শিশুদের পিতা-মাতা, অভিভাবক প্রায় সবাই উচ্চশিক্ষিত ও অতি সচ্ছল। তাদের অর্থের অভাব হওয়ার কথা নয়। তাহলে কি তাঁরা দামি খাবার খেলেও তাতে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান থাকছে না? এ প্রশ্নের উত্তর সবার জানা। পুষ্টিসম্পন্ন খাবার কেনার সক্ষমতা এখানে কোনো বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে কথিত ফাস্ট ফুডের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি।
তা ছাড়া ফাস্ট ফুডে দেওয়া নানা রাসায়নিকে লুকিয়ে আছে আসক্তি বাড়ানোর নানা উপাদান। সোডিয়াম বেনজোয়াট, পটাশিয়াম সরবেট ও মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট। ফাস্ট ফুড প্যাকেজিং থেকে দূষণের কারণে খাবারে প্যাথালেইটসের (Phthalates) উপস্থিতি বিচিত্র কিছু নয়। এসব রাসায়নিকের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির হতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর কিন্তু দামি খাবারের প্রতি শিশুদের ও বড়দের আসক্তি নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা আসক্তি বৃদ্ধির বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, ‘জিহ্বায় জল আনা হ্যামবার্গার পনিরের সঙ্গে এক ব্যাগ গরম খাস্তা ভাজা (ফ্রাই), সে সঙ্গে একটা সুপার সাইজ সোডা দিয়ে এমন নিখুঁত কম্বো ডিজাইন ফাস্ট ফুড তৈরি করা হয়, যাতে ভোক্তা আরও কিছুর জন্য বারবার ফিরে আসেন। চর্বি, শর্করা এবং সোডিয়ামের যৌগ ক্রেতাকে বুঁদ করে রাখে। এমনভাবে বন্দী করে, যা অ্যালকোহল বা ড্রাগের আসক্তি থেকে আলাদা নয়।’
অনেক সময় দেখা যায়, সাইনবোর্ডের দিকে না তাকিয়েই ছোট্ট একটা ফাস্ট ফুডের দোকান শিশুরা খুঁজে বের করে ফেলে। গন্ধ তাদের মাতিয়ে রাখে। ফাস্ট ফুডে আসক্ত এমন শিশু-কিশোরদের কে ফেরাবে পুষ্টিকর মাছ ডাল আর সবজির দিকে?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোকাল হেলথ বুলেটিনের তথ্যমতে, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বছরে দুই লাখের বেশি মানুষ চোখের চিকিৎসা নেয়।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদ্যালয়, বাইরে বেড়ানো, খেলাধুলা বন্ধ থাকায় শিশুদের ডিভাইস আসক্তি অনেক বেড়ে গেছে। খেলা, অনলাইন ক্লাস—সবকিছুতেই তাদের ডিভাইসের ব্যবহার বেড়েছে। এতে ‘ড্রাই আই’ থেকে শুরু করে রেটিনার কার্যকারিতা হ্রাস, মাইনাস পাওয়ার বৃদ্ধিসহ শিশুদের নানা চোখের রোগ বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে পরিচালিত সিচুয়েশন অ্যানালাইসিস অব ভিশন-২০২০ অনুসারে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১ দশমিক ৫ শতাংশ অন্ধ এবং ২১ দশমিক ৬ শতাংশ স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন। এ ছাড়া প্রায় ১৫ লাখ শিশু চোখের নানা সমস্যায় ভুগছে। দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধায় পড়া শিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এটিকে নিকট দৃষ্টি বা হ্রস্ব দৃষ্টি বা মায়োপিয়া (Myopia) বলে। এটি চোখের চারটি প্রধান রোগের একটি। এটি আসলে চোখের সেই অবস্থা, যখন চোখের তারারন্ধ্র বা তারারন্ধ্রের ভেতর দিয়ে আসা আলো অক্ষিগোলকের রেটিনায় না পড়ে তার সামনে কোনো স্থানে একটি বিন্দুতে মিলিত হয়ে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে। তাতেই সৃষ্টি হয় বিপত্তির।
২০১৯ সালে আমেরিকান একাডেমি অব অফথালমোলজি (এএও) মায়োপিয়াকে একটি জরুরি বিশ্বস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ঘোষণা দিতে টাস্কফোর্স গঠন করে। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির অফথালমোলজির অধ্যাপক এবং এএওর সরকারবিষয়ক মেডিকেল ডিরেক্টর মাইকেল রেপকার মতে, ‘এটি এমন এক সমস্যা, যা কয়েক দশক পরে আমাদের অন্ধত্বের মহামারির দিকে নিয়ে যাবে।’
বিশ শতকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে ১২ থেকে ৫৪ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে ৪২ শতাংশের মায়োপিয়া ধরা পড়ে, যা সত্তরের দশকে ২৫ শতাংশের মতো ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বড় কোনো জরিপ না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুচিকিৎসকেরা একমত, মায়োপিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।
ঢাকার চক্ষুবিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, প্রতিদিন ৩ হাজার রোগী এখান থেকে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে গড়ে ৫০ শতাংশ রোগী শিশু, যাদের দৃষ্টিশক্তিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ কোটি ৪৩ লাখ লোক দৃষ্টিজনিত ত্রুটির সমস্যায় ভোগেন। সারা দেশে ঠিক কত শিশু এমন সমস্যায় ভুগছে, তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে কোনো গবেষণা নেই। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকেরা বলেছেন, সেখানে আসা শিশুদের ৭০ শতাংশ দূরের জিনিস ভালো দেখতে পায় না। দিন দিন বাড়ছে দৃষ্টিত্রুটি শিশুর সংখ্যা।
কীভাবে প্রতিরোধ সম্ভব
সবার আগে শিশুকে ফাস্ট ফুডের ফাঁদ থেকে ফেরাতে হবে।
বিশিষ্ট চক্ষুরোগবিশেষজ্ঞ মকসুদে মওলা এসব ক্ষেত্রে যেসব কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলো হচ্ছে—
১. প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা ঘরের বাইরে খোলামেলা জায়গায় শিশুর খেলাধুলা বা ঘোরাফেরা করা।
২. মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিভাইস টাইম কমাতে হবে।
৩. মায়োপিয়ার অগ্রগতি শ্লথ করতে চিকিৎসকেরা কখনো কখনো অ্যাট্রোপিন শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ চোখে ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
৪. চশমা প্রয়োজন হলে সঠিক পাওয়ারের চশমা ব্যবহার।
এই চারটি কাজের মধ্যে সবচেয়ে জরুরি বাইরে ঘোরাফেরা, খেলাধুলা।
যুক্তরাষ্ট্রের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তুলনামূলক গবেষণায় দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে দৈনিক এক ঘণ্টা বাইরে খেলাধুলার বিরতি দেওয়া হতো, সেসব বিদ্যালয়ে শিশুদের হ্রস্ব দৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কম। এ রকম অনেক গবেষণা চীনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও হয়েছে। একইভাবে গ্রামের বিদ্যালয়ের শিশুদের চোখের দৃষ্টি সমস্যা শহরের শিশুদের তুলনায় ৫০ শতাংশেরও কম।
এ জন্য পৃথিবীর বহু দেশে বিদ্যালয়ে এক থেকে দুই ঘণ্টা বাইরে ঘোরাফেরা ও খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশেও এই পদ্ধতি চালুর চেষ্টা চলছে। আপনার শিশুকে দৈনিক এক ঘণ্টা দিনের আলোতে বাইরে সময় করে দিন। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঠ আছে, সেখানে ভর্তি করান। বিদ্যালয়ে এক ঘণ্টা বিরতির যেন ব্যবস্থা করা হয়, সে জন্য আওয়াজ তুলুন। মায়োপিয়া শুধু চশমার সমস্যা নয়, রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়ার মাধ্যমে অন্ধত্বসহ চোখের নানা মারাত্মক রোগের সূতিকাগার। তাই শিশুর চোখ নিয়ে ভাবতে হবে, তার দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। চশমার ফ্রেমের যে খরচ, তার চেয়ে অনেক কম খরচে শিশুকে বাঁচানো সম্ভব।