“ভয়াবহ ডেঙ্গু” পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় লিখেছেন গওহার নঈম ওয়ারা (প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৩)
গত মে মাসে (২৮ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে আসন্ন ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সবাইকে সাবধান করে এগারো দফা সুপারিশ পেশ করেছিল।
সুপারিশগুলো ছিল-
১. সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ স্ক্রিনিংয়ের পর্যাপ্ত কিটের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু স্ক্রিনিংয়ের চার্জ ১০০ টাকার বেশি হওয়া যাবে না।
২. ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি বেড়ে গেলে আবাসিক চিকিৎসক ও আরএমও’র কক্ষে অতিরিক্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দিতে হবে। যাতে আগত ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত না হয়।
৩. হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত মশারির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
৪. কোনো ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য প্লাটিলেট প্রয়োজন হলে জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। ২৪/৭ ল্যাব খোলা রাখতে হবে। সরকারিভাবে ২১টি সেন্টারে প্লাটিলেট সরবরাহের ব্যবস্থা আছে, কোনো রোগীর প্লাটিলেট প্রয়োজন হলে উল্লেখিত ২১টি সেন্টার থেকে সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। এসব সেন্টারের মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, বাংলাদেশ (এনআইসিভিডি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজি (নিকডো), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল (নিনস), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ), রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহামান মেডিক্যাল কলেজ, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিডফোর্ট হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর, শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ।
৫. ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার সহযোগিতায় হাসপাতালের চারপাশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ডাব বিক্রি বন্ধ করতে হবে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
৬. ডেঙ্গু একটি ভেক্টরবাহিত রোগ বিধায় জিও লোকেশন ট্রেসিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মোবাইল নম্বর এবং পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা অবশ্যই সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করতে হবে।
৭. আইইডিসিআর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার যৌথ উদ্যোগে কন্ট্রোল রুম খুলতে হবে।
৮. আগ্রহী চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখায় যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
৯. এডিস মশার লার্ভা নিধনে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
১০. বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ডেঙ্গু শনাক্তকরণের এনএস১ অ্যান্টিজেন (সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা), আইজিজি এবং আইজিএম (সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা), সিবিসি (সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা) পরীক্ষা সরকারের পূর্বনির্ধারিত মূল্যে করতে হবে।
১১. বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী করতে হবে এবং প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখাকে অবহিত করতে হবে।
বলতে বাধা নেই, অতীতের যে কোনো সময়ের থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। মৌসুম-পরবর্তী জরিপ, গত চার বছরের প্রথম ছয় মাসের আক্রান্তের সংখ্যা এবং গত ২২ বছরের আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলেছে, দেশে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর অপ্রত্যাশিত হারে সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। চলতি বছর (৭ জুলাই পর্যন্ত) সারাদেশে ডেঙ্গুতে মোট ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি চারজন রোগীর একজন শিশু। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক গত তিন বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে সরকারের হিসাবে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। যদিও তিন শতাধিক মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। গত বছর সরকারের হিসাবে মৃত্যু হয় ১৮১ জনের, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। চলতি বছর সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুতগতিতে। গত কয়েক বছরে প্রথম ছয় মাসে এত মৃত্যুও দেখা যায়নি। সামনের দিনগুলোয় মৃত্যুহার কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে
ঈদের নড়াচড়াতে ডেঙ্গু এখন সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। গত ৭ জুলাই ভর্তির এক ঘণ্টার মধ্যে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু রোগী মারা যান। শুক্রবার ৭ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ওই আক্রান্ত ব্যক্তি। তিনি গাজীপুরের মাওনায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। গত শনিবার (৮ জুলাই) হাসপাতালের ৩টি ওয়ার্ডে (১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড) মোট ২৩ জন পুরুষ রোগী ভর্তি ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই সিলেট, জামালপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ গিয়েছিলেন। বলা যায় অভিবাসী শ্রমিক বা কর্মজীবী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, রোগীদের প্রতি নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি আলাদা ওয়ার্ড গঠনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রোগী ভর্তি ৩০ জন পার হলেই চালু করা হবে আইসোলেশন ওয়ার্ড।
সিলেটে এখন পর্যন্ত (৮ জুলাই) ৮৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মৌসুমের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় গোয়াইনঘাট উপজেলায়। সেই রোগীর ঢাকা ভ্রমণের রেকর্ড পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ঢাকা ভ্রমণের সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। গোয়াইনঘাট ছাড়াও মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার পর এখন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা। ওসমানী মেডিক্যালের নির্মাণাধীন ভবনের বেশ কয়েকটি জায়গায় পাওয়া গেছে এডিস মশার লার্ভা। অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে এসব লার্ভা ধ্বংস করেছে সিসিক। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ৩টি ওয়ার্ডে পৃথক ডেঙ্গু কর্নারের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যাদের ১২ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, ৪ জন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
এই ডেঙ্গু সেই ডেঙ্গু নয়
ডেঙ্গু তার চেহারা-সুরত, স্বভাব-চরিত্র সবই পাল্টাচ্ছে। ডেঙ্গুজ্বর এখন আর আগের মতো মাথায় চড়ে বসছে না। উচ্চতাপমাত্রার জ্বর দেখা যাচ্ছে না। এখন সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথার আলামত নিয়ে আসছে ডেঙ্গু। থাকছে না শরীরে ব্যথা আর কয়েকদিনের লাগাতার জ্বর। ভেতরে ভেতরে প্লাটিলেট কমে গেলেও টের পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু চট করে সবকিছু গুবলেট হয়ে যাচ্ছে। রক্তচাপ হঠাৎ করে নেমে যাচ্ছে, কিডনিতে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। হঠাৎ হঠাৎ আক্রান্ত ব্যক্তি জ্ঞান হারাচ্ছে। ডাক্তার যাকে শক সিনড্রোম বলছেন। খবর নিয়ে দেখা গেছে, ডেঙ্গুতে এবার বেশি মৃত্যু হওয়ার একটা বড় কারণ এই শক সিনড্রোম। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ সেদিন টেলিভিশনে জানালেন, সামান্য জ্বর, কাশি ভেবে ডেঙ্গুকে প্রথমে গুরুত্ব দিচ্ছে না পাবলিক, দেখা যাচ্ছে তারা আসলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। ফলে যারা দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থবার আক্রান্ত হচ্ছে, তারা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের মধ্যে পড়ছে।
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা এখন আর দিন-রাতের তারতম্য করছে না, সুযোগ পেলে রাতেও ছাড় দিচ্ছে না, আগে কেবল দিনের বেলায়ই কামড়াত, রাতে অবসরে থাকত। শুরুর দিকে জানা ছিল এডিস পয়ঃপরিষ্কার পছন্দ করে, সে কেবল পরিষ্কার পানিতেই ডিম পাড়ে। এখন জমানা পাল্টিয়েছে, সে এখন অপরিষ্কার ও নোংরা পানিতেও আপত্তি করছে না। এডিসের লার্ভা মিলছে সর্বত্র।
কেন এমন হালহোল
ডেঙ্গু শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য রোগ হওয়ার পরও দিন দিন ডেঙ্গু শক্তিশালী হচ্ছে আর আমরা হায় হায় করছি। ‘মশা নিধনে আমরা এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা ধ্বংস হয়নি বরং অর্থের অপচয় হয়েছে।’ এ কথা বলেছিলেন উত্তরের মেয়র আতিক। এ কথা বুঝতে তাকে যুক্তরাষ্ট্র যেতে হয়েছিল। শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগের ঘাটতি ছিল, এখনো আছে। সুস্থ সমন্বয়ের পথে না হেঁটে একে অপরকে দোষারোপ করেই দায় সারছে। তা ছাড়া আছে কীট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করে পদক্ষেপ না নেওয়া। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মশা নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত সময় হলো যখন মশা কম থাকে। কিন্তু যখন মশা বেড়ে যায় বা মশার যন্ত্রণায় নগরবাসী অতিষ্ঠ, তখন দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট, বিশেষ অভিযানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। ভুল সময়ে গৃহীত এসব কর্মসূচিতে লাভ হয় সামান্যই।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আগপাশতলা না ভেবে অনবরত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে মশার দেহে কীটনাশক সহন ক্ষমতা বেড়ে যায়। প্রতিটি প্রাণীদেহেই প্রকৃতিগতভাবে এ সহন ক্ষমতা তৈরি হয়। ফলে উচ্চমাত্রার কীটনাশক ছিটানোর পরও সহন ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে এখন আর আগের মতো মশা মরছে না। তা ছাড়া একেক স্থানের মশার জন্য একেক ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন সব জায়গায় একই ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকে। ডেঙ্গু বাড়ার এটিও একটি কারণ।
ভুলে গেলে চলবে না, মশা পয়দা হওয়ার পর তাকে মারার চেয়ে তার প্রজনন শৃঙ্খল ভেঙে দেওয়া অর্থাৎ চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখাটা সহজ ও জরুরি। দুঃখজনক হলেও সত্য, নাগরিকরাও মনে করছে তাদের কোনো দায় নেই। ওষুধ ছিটানোর ক্ষেত্রেও কোনো বিজ্ঞান মানা হচ্ছে না। মহল্লায় মহল্লায় খুঁজে দেখতে হবে কোথায় কোথায় মশা, কোন জাতের মশার উপদ্রব বেশি এবং সেই মশার জন্য কোন ওষুধ কতটুকু ছিটাতে হবে, তা নির্ধারিত করে জায়গামতো ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া যেখানে সম্ভব মশার অতিরিক্ত প্রজনন বন্ধ করার জন্য জলাশয়ে মাছ, হাঁস ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যে বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে তার চারপাশে ৫০০ মিটার ধরে এমনভাবে কার্যক্রম চালাতে হবে যেন একটি এডিস মশাও বেঁচে না থাকে।
এখন উপায় কী
ডেঙ্গু অনেকটা স্থানিক মহামারীর রূপ নিয়েছে। শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ এতে মারা যাচ্ছে। আক্রান্তরা বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছে। সীমিত কিছু হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগী গ্রহণে অনীহা প্রদর্শন করে। বর্তমানের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় বিশেষ ইউনিট বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া বিদ্যমান হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু ইউনিট স্থাপন আবশ্যক। জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নেওয়া চাই। সরকার ও জনগণের সম-অংশগ্রহণ এ সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রত্যেক জেলা সদরে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, কারও ওপর একক দোষ চাপালে চলবে না। ডেঙ্গু রোগ ও রোগী ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় নীতি প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।
কমপক্ষে ১০ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা জরুরি। এতে স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগসহ নাগরিকরাও যুক্ত থাকবে।