ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে সাধারণ গরিব মানুষের ক্ষতি নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন গওহার নঈম ওয়ারা (প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৩)
মোখার কারণে মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল থেকে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের সর্বত্র সংকট তৈরি হয়। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্কতার মুখে টার্মিনাল মহেশখালীর নির্ধারিত জায়গা থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই গ্যাস–সংকটের শুরু। পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
আসি আসি বলে মোখা আসেনি। চলে গেছে আরাকানে, এখন যাকে রাখাইন বলা হয়। মিয়ানমারের সেই রাজ্যে মোখা এখন শান্ত।
আমাদের হিস্যায় বলা চলে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় নয়, একটু ঝড় হয়েছে। তবে একেবারেই ক্ষতিহীন ছিল না এই ঝড়। ক্ষতি হয়েছে সাধারণ গরিব মানুষের। তাঁদের টিনের চাল খুলে পড়েছে। ‘ভুল’ গাছের (বিদেশি জাতের) ডাল ভেঙেছে। ঝুনা নারকেলের আঘাতে সেন্ট মার্টিনে একজন আহত হয়েছেন। বলা হচ্ছে, জান বাঁচলেও সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ আর শাহ পরীর দ্বীপের মানুষের অর্থনীতি আবার চাঙা হতে সময় লাগবে। ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন কেউ কেউ।
নিম্নবিত্তদের কাঁচা ঘরবাড়ি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে এই ঝড়ে। এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা আর চোখের আন্দাজ অনুযায়ী সব মিলিয়ে ঝড়ের প্রভাবের শিকার হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ (কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের হিসাবে দুর্গত ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬২০ জন)। তাঁদের কেউ গৃহহীন হয়েছেন, কেউ কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। জীবিকা স্থগিত হয়েছে অনেকের।
নিম্নবিত্তের মানুষের ক্ষতিকে ‘সামান্য’ হিসেবে দেখার একটা বিলাসিতা আছে আমাদের। রবীন্দ্রনাথের ‘সামান্য ক্ষতি’ কবিতার করুনারা এখন আর গরিবের পক্ষে কথা বলার চেষ্টাও করেন না।
‘সামান্য ক্ষতি’ প্রতিরোধ করা যেত কি
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে প্রায় ২ হাজার ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর ১০ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা ‘প্রচণ্ড শক্তিতে ধেয়ে’ আসা মোখার সম্ভাব্য তাণ্ডবের তুলনায় অতিসামান্য ক্ষতি’। কিন্তু যার গেছে, তাঁর এটা সামান্য ক্ষতি বা দ্রুত নিরাময় যোগ্য ক্ষত নয়।
দেশের বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের অস্তিত্ব আর তার প্রায় সঠিক গতিবিধির খবর দিচ্ছিলেন কমপক্ষে দিন কুড়ি আগে থেকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর অবশ্য লঘুচাপ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি আমলে নেয় না। ঘূর্ণিঝড়, লঘুচাপ, নিম্নচাপ ইত্যাদির বাইরেও বৈশাখ থেকে আশ্বিন আমাদের ঝড়ের মাস। ঝড়ের মাসগুলোকে সামনে রেখে কাঁচা ঘরের খুঁটি পাল্টানো, অতিরিক্ত টানা দিয়ে ঘরটাকে ঝড়ে টিকে থাকার মতো মজবুত বা ইঞ্জিনিয়ারদের ভাষায় ‘রি ইনফোর্স ‘করার চর্চা অনেক দিনের।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল আঘাত হানা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ও অধ্যাপক আইনুন নিশাত উপকূলের মানুষদের আবাস চর্চা নিরীক্ষা করতে কুতুবদিয়ায় গিয়েছিলেন। সেখানে মানুষের নানা কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হন তাঁরা। দুজনেই মানুষের এই অভিজ্ঞতাপ্রসূত জ্ঞানের কদর করতেন। ঘরের চালার সঙ্গে অতিরিক্ত টানা দেওয়া বা ‘রি–ইনফোর্স ‘খুবই বিজ্ঞানসম্মত প্রকৌশলব্যবস্থা। নির্মাণ প্রকৌশলবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত এই কাজটি সাধারণ মানুষ রপ্ত করেছেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে বসবাস করতে করতে।
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে প্রচার
ঘূর্ণিঝড়ের ইঙ্গিত আসার সঙ্গে সঙ্গে যদি মানুষকে জানানো যেত, আর বলা হতো, আসন্ন ঝড়ের জন্য ঘরবাড়িগুলোকে মজবুত করুন, দরকার হলে খুঁটি পাল্টান, ঘরের টানাগুলো ঠিক করুন, ঝুনা নারকেলগুলো পেড়ে রাখুন, তাহলে উপকার পাওয়া যেত।
ঝড় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট মার্টিনে ঘরের ছাউনির টিন উড়ে যাওয়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। ঘরগুলো নিয়মমাফিক মজবুত করে তৈরি আর রক্ষণাবেক্ষণ করলে এমনটি হতো না। বাতাসের গতি কালবৈশাখীর কাছাকাছি থাকায় এই টিনগুলো উড়ন্ত তলোয়ার হয়নি, কিন্তু হতে পারত। ১৯৯১ সালে হয়েছিল। তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, উপকূল অঞ্চলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে টিনের ঘর আর তৈরি করতে দেওয়া হবে না। বলাবাহুল্য, ঢেউ টিন কোম্পানির মালিকদের সঙ্গে কেউ আর বিতর্কে জড়াতে চায়নি।
এর মধ্যে টিন রেখে ঝড়–সহনীয় ঘর নির্মাণের প্রযুক্তি পরীক্ষায় টিকে গেছে। ঢেউটিন জয়যুক্ত হয়েছে। তবে চর্চায় যে নেই, সেটি দেখা গেল টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপে। যে কায়দায় উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঝড়ের আগে শক্তপোক্ত করা হয়, সেই একই কৌশলে দড়ি, বাঁশ ও তার দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর ঘরবাড়ি সুরক্ষার ব্যবস্থা করা যেত।
ক্ষয়ক্ষতির নাজুকতার মধ্যে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোর স্থান ছিল তালিকার শীর্ষে। অনেক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা সেখানে ছিল। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনারের দেওয়া তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড়ে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে রোহিঙ্গা শিবিরে ২ হাজার ৫৪৮টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৭ জন রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন। শিবিরের ৩২টি শিক্ষাকেন্দ্র (লার্নিং সেন্টার), ২৯টি মসজিদ ও মক্তব এবং ২০টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটাও সামান্য ক্ষতি বলতে হবে। যেকোনো স্থানীয় কালবৈশাখী বা ভূমিধসে এর চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে।
মহাবিপৎসংকেত জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘মাইক’যোগে প্রচার শুরু হয়ে যায়। এবারও সেটা হয়েছিল। প্রমিত বাংলায় আর আঞ্চলিক ডায়ালেকটে (উচ্চারণ) সেসব বাণীতে ছিল মূলত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান। সেটা মানুষ শেষমুহূর্তের কাজ হিসেবে চিন্তা করে রাখে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জানমাল, গবাদি পশু, পুকুর, মাছ, জাল ও নৌকা ইত্যাদি রক্ষার কাজকে মানুষ তখন প্রাধান্য দেয়। সে জোয়ার–ভাটা, ঝড়ের সময় (রাতে না দিনে আঘাত হানবে) ইত্যাদির হিসাব কষে তার করণীয় ঠিক করে। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কীকরণ বার্তা দেওয়ার সময় এগুলো নিয়েও পরামর্শমূলক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।
সংকেত এখনো বন্দরের জন্য
দূরবর্তী সতর্কসংকেত, দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত, স্থানীয় সতর্ক সংকেত, স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত, বিপৎসংকেত, মহাবিপৎসংকেত, যোগাযোগবিচ্ছিন্ন সংকেত ইত্যাদি মাত্রার আর নানা নামের সংকেত সংকট বাড়াচ্ছে। অধ্যাপক আইনুন নিশাত এই সংকেতব্যবস্থাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। সংকেতগুলো মানুষকে দিকনির্দেশনা দেয় না; বরং বিভ্রান্ত করে।
প্রযুক্তির কারণে মানুষের মুঠোর মধ্যে যখন সব তথ্য, তখন কেন সে খুঁজতে যাবে আদতে ৮ আর ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। পাঁচ ও যা, সাতও তা–ই। বরিশাল ও পটুয়াখালীর মানুষ কেন আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হবে, যখন তারা উপগ্রহের ছবি দেখে বুঝতে পারছেন, সর্বনাশ হলে রাখাইনে হবে, হিজলা বা রাঙ্গাবালিতে নয়।
ঘূর্ণিঝড় মোখায় জাকির হোসেনের ঘর উড়ে যায়। পালিত বিড়াল নিয়ে কন্যাশিশু দাঁড়িয়ে আছে উড়ে যাওয়া বসতভিটায়। গতকাল কোনাপাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।ছবি : সাজিদ হোসেন
গ্যাস–সংকট ও ডায়রিয়া
মোখার কারণে মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল থেকে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের সর্বত্র সংকট তৈরি হয়। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্কতার মুখে টার্মিনাল মহেশখালীর নির্ধারিত জায়গা থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই গ্যাস–সংকটের শুরু। পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
এর আগে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, ‘একটা এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) চলে গিয়েছিল, পাইপ খুলে দিয়ে। যেটা খুলে চলে গেছে, সেটা রিকভারি (মেরামত) করতে বিদেশ থেকে ডুবুরি আসবে। তারা আসার পর এটির কানেকশন (সংযোগ) দেবে। তাতে আমাদের ১০-১২ দিন সময় লাগবে। ৪০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের একটা শর্টেজ (ঘাটতি) থাকবে। তবে এখনকার থেকে পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে।’
চট্টগ্রামে সার কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গৃহস্থালি মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০ কোটি ঘনফুটের ওপরে গ্যাস প্রয়োজন। বাসাবাড়িতে চাহিদা ৫ কোটি ঘনফুটের মতো। চট্টগ্রাম অঞ্চলে মূলত এলএনজি টার্মিনাল থেকে আসা গ্যাস দিয়েই চাহিদা মেটানো হয়।
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএ) সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানাচ্ছে, এলএনজি বন্ধ থাকার সময় জাতীয় গ্রিড থেকে কিছু গ্যাস চাওয়া হয়েছিল। ভাবতে অবাক লাগে, একটা জানা সংকট মোকাবিলার কোনো বিকল্প পথ না রেখেই এত ভারী ভারী কাজ হচ্ছে। জাতীয় গ্রিডের কাছে দেনদরবার করে কেন গ্যাস আনতে হবে? সংকটে থাকা দেশের এক অংশের মানুষকে কেন দয়াদাক্ষিণ্যের জন্য অপেক্ষা করতে হবে?
অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, গ্যাসের দাম বাড়লে বা কম পাওয়া গেলে, মানুষ খরচ কমানোর জন্য প্রথমে পানি ফুটিয়ে পান করার কাজটি বন্ধ করে দেয়। ঝড়ের আগে চট্টগ্রামের ডায়রিয়া পরিস্থিতি এতটাই নাজুক ছিল যে ঢাকা থেকে তথ্য অনুসন্ধানী দল পাঠাতে (৮ মে) হয়। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ১২ সদস্যের একটি দল চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পানিসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে।
তথ্য অনুসন্ধান ও চিকিৎসাসেবার সঙ্গে যুক্ত ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর রশিদ ১১ মে সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমরা বর্তমানে ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে কলেরার জীবাণুতে আক্রান্ত রোগীও পাচ্ছি। সাধারণ সময়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে কলেরার জীবাণু মেলে। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে এ হার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে।’ বলা বাহুল্য গ্যাস–সংকট হলে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সেন্ট মার্টিন প্রসঙ্গ
এবার ঝড়ে সেন্ট মার্টিন নিয়ে ‘ঝড়’ উঠেছিল বেশি। দ্বীপের সব মানুষকে উদ্ধার করে মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন অনেকে। বলেছিলেন, পুরো দ্বীপ হাওয়া হয়ে যেতে পারে। কেউ বাঁচবে না সেখানে।
আদতে প্রবালদ্বীপগুলো গড়ে ওঠে সাগরের এমন অংশে যেখানে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশংকা কম বা নেই। প্রবাল দ্বীপমালার দেশ মালদ্বীপে আমাদের মতো সর্বনাশা ঝড় জলচ্ছ্বাসের রেকর্ড নেই। সেন্ট মার্টিনেরও তা–ই। কিন্তু আমরা এই দ্বীপটির সঙ্গে বড় অন্যায্য আচরণ করে তাকে ধ্বংসের দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছি। প্রবালের প্রাচীর ভেঙে কংক্রিটের পিলারের ওপর বহুতল ইমারত গড়ছি। এমন চলতে থাকলে ঝড়–ঘূর্ণিঝড় ছাড়াই এক দিন সেন্ট মার্টিন সাগরে হাপিস হয়ে যাবে।
প্রচারের কারণেই হোক আর সেন্ট মার্টিনের বেড়ে যাওয়া নাজুকতার কারণেই হোক, সেখানকার মানুষ এবার ভীষণ ভয় পেয়েছেন। এই মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে দ্বীপবাসীর জন্য। আমাদের ত্রাণ প্যাকেজে কি এই বিষয় আমলে নেওয়া হবে।
আমলে কি নেওয়া হবে—কেন ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে একজনও ডুবুরি নেই, যিনি খুলে যাওয়া পাইপের সঙ্গে আবার সংযোগ স্থাপনের কাজটা করতে পারেন বা করতে জানেন। বছরে অন্তত দুবার ঝড়ের মৌসুম আসবে, তার জন্য কি আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে?
ঝড়ের আশংকার কয়দিন নানা আলোচনা আর টক শোতে স্মৃতির অতলে হারিয়ে গিয়ে আত্মতুষ্টির নানা রঙের ঢেকুরের চর্চা ছিল প্রচণ্ড। নিঃসন্দেহে আমাদের অনেক অর্জন আছে, মানুষ এখন অনেক সচেতন, জেলা ও উপজেলার কর্মকর্তারা অনেক বেশি তৎপর। কিন্তু এটাও সত্য, ১৯৯১ সালের পর ঘূর্ণিঝড়ের পতন আর জোয়ারের আগমন একসঙ্গে হয়নি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কোনো কোনো কর্মকর্তা বলেছেন, বঙ্গবাজারের এত বড় আগুনে একজন লোকও মরেনি তাঁদের প্রস্তুতির কারণে। তাঁরা এটা বলেননি যে রাতে ওখানে কেউ থাকে না। মানুষ ছিল না, তাই কেউ মরেনি। এটা আমাদের প্রস্তুতি নয়, ঘটনাচক্র। ঘটনাচক্রকে সাফল্য হিসেবে দেখালে একদিন আমরা ঠকবই। যেদিন সত্যি বাঘ আসবে সেদিন কেউ পাশে থাকবে না।
ছবিসূত্র : প্রথম আলো (সাজিদ হোসেন)