পরিস্থিতি প্রতিবেদন-৪ ১৬ এপ্রিল ২০২৩
চলমান তাপপ্রবাহের ফলে হিটস্ট্রোকে দুইজনের মৃত্যু: তীব্র এই তাপপ্রবাহ থাকবে আরো কিছুদিন
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রমতে খুলনা বিভাগের দশ জেলাসহ ঢাকা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা ও পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের অবশিষ্ট অন্যান্য জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে ১৮ বা ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড: ১৫ এপ্রিল, ২০২৩ ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ঢাকায় ১৯৬৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ১৯৬০ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গতকাল (১৫ এপ্রিল ২০২৩) ঢাকার বাইরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। সে হিসাবে গত ৯ বছরের মধ্যে গতকাল (১৫ এপ্রিল, ২০২৩) দেশের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ছিল। চলতি বছর (২০২৩) ০২ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১৩ দিন ধরে আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করে আসছে চুয়াডাঙ্গায়।
কৃষিতে ক্ষতি: তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে সারাদেশ। বিভিন্ন জেলার চাষিরা দুশ্চিন্তায় কাটাচ্ছে দিন। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গরমে ঝলসে যাচ্ছে বোরো ধান। বোরো ধানের পাশাপাশি সবজি চাষেরও প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। গভীর নলকূপ ও পাম্প থেকে সেচ দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। জমিতে পানি দিলেও নিমেষে তা মাটির গভীরে চলে যাচ্ছে। তীব্র রোদে ঝরে যাচ্ছে গাছের আম, লিচু, লেবু ও কাঁঠাল। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসারের সূত্রমতে এবার ৪০ ভাগ লিচু গাছে মুকুল আসেনি। এখন গরম ও খরায় লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে।
তীব্র এই গরমে রেল চলাচলে সতর্কতা: বিভিন্ন পত্রিকার সূত্রমতে তীব্র গরমে যশোরে গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন। তীব্র গরমে রেললাইন বেঁকে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সতর্কতার সঙ্গে চলছে ট্রেন। দুর্ঘটনা এড়াতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথের বিভিন্ন অংশে গতি কমিয়ে সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৫ এপ্রিল রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশে রেললাইনের পাশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি পাওয়া গেছে। তাপমাত্রার তীব্রতার কারণে এ রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশে সব আন্তনগর ও লোকাল ট্রেনকে সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার গতিতে চালাতে লোকোমাস্টারদের নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আর মালবাহী ট্রেনগুলোকে ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
পূর্বাভাস: আবহাওয়া অধিদফতর আশঙ্কা করছে তাপমাত্রা এই হারে বাড়তে থাকলে আগামী কয়েক দিনে তা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে। ১৯ এপ্রিল দেশের পশ্চিমাঞ্চলের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়ে ৪২-৪৪º সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা বিভাগ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, ঈশ্বরদী, বগুরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, ঢাকা, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালি, পার্ব্যত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল সমূহ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০º সেলসিয়াসের উপর) এবং বরিশাল, রাজশাহী, ঢাকা, এবং চট্টগ্রাম বিভাগের বাকি এলাকা এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে মাঝারি তাপপ্রবাহ (৩৮º সেলসিয়াসের উপর) বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, চলতি সপ্তাহে সিলেটসহ কয়েকটি অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এতে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও তাপপ্রবাহ থাকবে মৃদু থেকে মাঝারিতেই থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি: চলমান এই তাপ প্রবাহ তৈরি করছে হিট স্ট্রোকের শঙ্কা, ইতোমধ্যে বরগুনা জেলায় হিটস্ট্রোকে দুইজন মারা গিয়েছে। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে এবং হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে করণীয় সম্পর্কে জানতে দেখুন…..
তথ্যসূত্রঃ
তাপ প্রবাহ