দুর্যোগ প্রস্তুতির বিভিন্ন ধাপ

দুর্যোগ প্রস্তুতির বিভিন্ন ধাপ
• দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী করণীয় সম্বন্ধে জানা। স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে দুর্যোগ প্রস্তুতির উপর সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
• দুর্যোগ প্রস্তুতি পরিকল্পনা, এলাকার একটি মানচিত্র আঁকা, এলাকার সম্পদ ও সেবাসমূহ চিহ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ নাম্বার সংগ্রহ করা, সবাইকে জানানো এবং এমন জায়গায় রাখা যেন সবার দৃষ্টিগোচর হয় এবং সময় অনুযায়ী এই তথ্য সকলের কাজে লাগবে এবং চেক লিস্ট তৈরি করা।
• বয়সভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, দুর্যোগ আঘাত হানার পর অনুসন্ধান এবং উদ্ধার কাজের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা।
• বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাবার জন্য মহড়ার আয়োজন করা।
• রেডিও থেকে আবহাওয়া বার্তা এবং দুর্যোগের গতিপথ সম্পর্কে খবর রাখা। দুর্যোগ সম্পর্কে সতর্ক সংকেত এবং পূর্বাভাস জানা। কমিউনিটি রেডিওর বার্তা নিয়মিত শোনা।
• সঠিকভাবে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ এবং খাবার পানি জমা রাখার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা।
• পরিবারের জন্য সঠিকভাবে প্রাথমিক চিকিৎসার জরুরি বাক্স প্রস্তুত রাখা।
• দুর্যোগ আসার পূর্বেই কোনো উঁচু স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়া। ছোট শিশু, অসুস্থ নারী, প্রবীন, এবং প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেয়া। ছোট শিশুদের পরিবারের বড়দের তত্বাবধানে রাখা। পানিতে ডুবে, সাপ ও বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ থেকে পরিবারের সবাইকে সাবধান রাখা।
• বন্যার ক্ষয়ক্ষতি রোধের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আছে। আমাদের উচিত স্বাভাবিক সময় দুর্যোগের প্রস্তুতি হিসেবে এই বাঁধগুলোকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা। বাঁধে কোন ফাটল দেখা যাচ্ছে কিনা এই বিষয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা এবং সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত।
• বন্যা প্রবণ এলাকার চারপাশে নিয়ম মেনে স্থানীয় প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে এবং পরিচর্যা করতে হবে। কেউ যেন বাঁধের ঘাস ও গাছের ক্ষতি না করে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। স্বাভাবিক সময়ে দুর্যোগ প্রস্তুতি আমাদের দুর্যোগকালীন সময়ের বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে।

পরিবার পর্যায়ে দুর্যোগ প্রস্তুতি
• পরিবারের সদস্যরা আলোচনা করে দুর্যোগ প্রস্তুতি পরিকল্পনা তৈরি করবে।
• বন্যাপ্রবণ এলাকায় পরিবারের সদস্যরা পরিকল্পনা করে আগে থেকে বাড়ির ভিটা উঁচু করে বাড়ি বানাবে বা মেরামত করবে যাতে করে বন্যার পানি ঘরে প্রবেশ করতে না পারে।
• বাড়ির মধ্যে এবং এর আশেপাশে নিরাপদ জায়গা চিহ্নিত এবং সীমানা নির্ধারণ করবে।
• প্রয়োজনীয় ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের ঠিকানা জেনে রাখা যাতে করে পরিবার সহজেই তাদের কাছ থেকে দুর্যোগের সময় সহায়তা পেতে পারে যেমন: স্থানীয় দমকল অফিস, স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয়, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের কার্যালয়ের ঠিকানা এবং টেলিফোন নম্বর সংগ্রহ করতে হবে।
• প্রত্যেক পরিবারে একটি জরুরি বাক্স (এমারজেন্সি কিট) থাকা প্রয়োজন। এই বক্সে থাকবে প্রাথমিক চিকিৎসার জিনিসপত্র, শুকনা খাবার, পানি ইত্যাদি।

সামাজিক/কমিউনিটি পর্যায়ে দুর্যোগ প্রস্তুতি
• দুর্যোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।
• দ্রুত ও সময়মত সতর্ক বার্তা প্রদান।
• এলাকার সবাই (নারী, পুরুষ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীন, শিশুসহ) মিলে দল গঠন করতে হবে। দুর্যোগকালীন সময়ে কে কি করবে তাও ঠিক করে রাখতে হবে।
• রেডিওতে নিয়মিত আবহাওয়া সংবাদ শোনার অভ্যাস করতে হবে।
• রাস্তার পাশে নারিকেল, কলা, বাঁশ, তাল ও অন্যান্য শক্ত গাছপালা লাগাতে হবে।
• সম্ভাব্য বন্যার ক্ষেত্রে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করে সেগুলি ব্যবহারের উপযোগী করা।
• ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা
• এলাকার বাঁধের দুর্বল অংশগুলো চিহ্নিত করে তা মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষকে বলতে হবে।
• সম্ভব হলে কমিউনিটি পর্যায়ে ক্ষুদ্র আকারের সঞ্চয় তহবিল গড়ে তুলতে হবে, যা দিয়ে দুর্যোগ পরবর্তীতে ত্রাণ কিংবা রাস্তা, বাঁধ বা আশ্রয়কেন্দ্রের ছোট ছোট মেরামতগুলো নিজেদের উদ্যোগে সেরে ফেলা যায়।
• প্রতিবেশিদের সাথে কথা বা গল্প করার সময় দুর্যোগে কি করনীয় এ বিষয়েও আলোচনা করলে সকলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।

প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দুর্যোগ প্রস্তুতি
• আসন্ন বন্যার খবর সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। উদ্ধার ও স্থানান্তর করা ও সাড়া প্রদানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন রকমের দুর্যোগ প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম হাতে নেয়। এর মধ্যে অন্যতম হল:
• বন্যা ও নদী ভাঙনের সতর্ক সংকেত প্রচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও শক্তিশালী করা। বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) জরুরি প্রস্তুতি পরিকল্পনা তৈরি করে।
• সিপিপি তার কর্মী বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়, যাতে তারা কার্যকরভাবে দুর্যোগকালে কাজ করতে পারে।

Leave a Reply