‘প্রকৌশলীদের মারধর’ ঘটনা নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন গওহার নঈম ওয়ারা (প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৩)
নোয়াখালীতে শুধু নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রকৌশলীদের মারধরের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা ক্ষমতাসীন দলের বলে তাঁদের শাস্তি হয় না। আবার ঠিকাদার–প্রকৌশলী ‘আনহোলি’ সম্পর্কও এসব ঘটনার জন্য দায়ী।
পলাশীতে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল এক ব্রিটিশ কোম্পানি। নবাব ছিলেন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি বা সুবে বাংলা বা বাংলা–বিহার–উড়িষ্যা (এখনকার ওডিশা) অঞ্চল নিয়ে গঠিত রাজ্যের সরকারপ্রধান। সেই যুদ্ধে নবাব অর্থাৎ সরকার হেরে যায় নিরেট এক প্রাইভেট কোম্পানি বা বেসরকারি বেনিয়া প্রতিষ্ঠানের কাছে।
বাংলা–বিহার–উড়িষ্যায় শুরু হয় কোম্পানির শাসন। ব্যবসায় লাভ করাটাই ছিল সেই শাসনের একমাত্র মঞ্জিলে মকসুদ। কোম্পানির লোকেরা থাকতেন কুঠি বা কোঠায় অর্থাৎ পাকা বাড়িতে। সেই কুঠিতেই ছিল বন্দিশালা, ‘রিমান্ডের’ ব্যবস্থা, গুম–খুনের বিস্তারিত কলাকৌশল।
কাগজে–কলমে নামেমাত্র নবাবের সলতে জ্বালিয়ে রাখা হলেও ‘প্রজা’ শাসনের লাঠি–বন্দুক সবই ছিল কুঠিয়াল ব্রিটিশদের কবজায়। বাংলা–বিহার–উড়িষ্যার দেওয়ানি সনদ পেয়ে জনগণের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ের কাজটা শুরু করে লর্ড ক্লাইভের কোম্পানি। কাউকে কোনো হিসাব দিতে হতো না। টাকা যাঁর কাছে, তার আবার জবাবদিহি কী। এটাকেই ইতিহাসে দ্বৈত শাসন বলা হয়।
অবাধ্য প্রজা বা রাজকর্মচারীকে তাঁরা নিজেদের তরিকায় শায়েস্তা করতেন। ব্যবসার স্বার্থে যখন যেভাবে প্রয়োজন, সেভাবে ব্যবস্থা নিতেন। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকে তার কিঞ্চিত বর্ণনা পাওয়া যায়। বর্ণনা থাকুক বা না থাকুক, বেনিয়া ব্রিটিশ কোম্পানির সেই কায়দা–কৌশলগুলো আমাদের আর শেখাতে হয়নি। কীভাবে কীভাবে যেন শাসন নামের সেই শোষণপ্রক্রিয়া আমাদের খাসলতের অংশ হয়ে গেছে। ঢুকে গেছে আমাদের ডিএনএতে, অস্থিমজ্জায়।
প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের (১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ) পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ রাজের শাসন, সাতচল্লিশের ভারত ভাগ, একাত্তরের স্বাধীনতা—কোনো কিছুই যেন সেই কোম্পানি শাসনের ওপরে উঠতে পারছে না। ব্যবসার নামে লুটপাট, মারধর এবং ব্যক্তিগত পেটোয়া বাহিনীর মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতার সেই অন্যায্য ব্যবহার এখনো চলছে; বরং তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে গণমাধ্যম আর বিচারব্যবস্থাকে ব্যবসার জালে জড়িয়ে ফেলার অন্যায় চেষ্টা।
প্রতিপক্ষকে মেরে হাড়গোড় ভেঙে আবার তার ওপর চুরির অপবাদ দিয়ে প্রচার চালানোর কৌশল অনেক দিনের পুরোনো। লর্ড ক্লাইভের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সময় বেয়াড়া প্রজাদের চুরির অপরাধ বা ‘বেড়া ডিঙানোর (ট্রেস পাস) অপরাধে’ অহরহ মারধর বা মেরে ফেলার ঘটনা ঘটত। সাক্ষী–সাবুদের অভাব হতো না। যাকে–তাকে নিয়ে সাক্ষী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হতো। সাক্ষীগোপালদের নামডাক তখন থেকেই। এখন কোনো কোনো গণমাধ্যমকে সেই সাক্ষীগোপালের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।
নির্মাণ বা সরবরাহের ঠিকাদারিতে কমিশন বা বকশিশ যা–ই বলেন, আগেও ছিল, এখনো আছে। তবে আগে চোখে লজ্জার একটি পর্দা ছিল, এখন আর সেটি নেই। ঠিকাদারেরা আগে মিস্ত্রি পালতেন, এখন পালেন গুন্ডা বা হেলমেট বাহিনী। ঠিকাদার মনে করেন, কমিশন যখন তিনি দিয়েছেন, তখন যা খুশি তা–ই করবেন। এখন সাধারণ মানুষের একধরনের উপলব্ধি হচ্ছে, প্রকৌশলী মানেই ঘুষখোর। মানুষের এই মনে করার বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে অনেক ঠিকাদার প্রকৌশলীদের ফাঁদে ফেলেন।’
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামকে বেধড়ক মারধর ও মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পিডিবির অবৈধ লাইন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় সাইফুলকে বেধড়ক মারধর ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেনসহ যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে মন্ত্রীর বাড়ির সামনের একটি ঘরে আটকে রেখে ওই উপসহকারী প্রকৌশলীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
বসুরহাট পৌরসভায় পিডিবির প্রকৌশলীকে মারধর ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও একশ্রেণির গণমাধ্যম প্রচার চালাচ্ছে—প্রকৌশলী ঘুষ চেয়েছিলেন। তাই তাঁকে ‘সংস্কার’ করা হয়েছে। পাবলিক ‘কোম্পানির’ কোনো দোষ নেই। যদিও প্রাথমিক মারধরের পর মন্ত্রীর ছোট ভাই শাহদাতের ‘কোম্পানি কুঠিতে’ তাঁকে পূর্ণ সংস্কারের জন্য নেওয়া হয়েছিল। সেখানেই তাঁর মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয়।
গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সেতুমন্ত্রীর আরেক ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে রূপক মজুমদার নামের এক ব্যবসায়ীকে প্রায় সাত ঘণ্টা পৌরসভার কুঠিতে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে রূপকের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন।
এবারও মন্ত্রীর ভাই শাহদাতের বিষয়ে শেষ পর্যন্ত প্রকৌশলী কী করেন, সেটি দেখার বিষয়। শিগগিরই হয়তো আমরা জানতে পারব, প্রকৌশলীকে মারপিটের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তিনি গরম থেকে রেহাই পেতে সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় মাথা ন্যাড়া করেছেন। এই তুচ্ছ ঘটনাকে পুঁজি করে একশ্রেণির পত্রপত্রিকা যেসব অতিরঞ্জিত খবরাখবর প্রকাশ করেছিল, তা সঠিক নয়।
সর্বশেষ গত বুধবার বাগেরহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক প্রকৌশলীকে তাঁর কার্যালয়ে ঢুকে মারধর ও তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত বুধবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে একদল যুবক পাউবোর বাগেরহাট সদর উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যান। তাঁরা বকেয়া বিল না দেওয়ার অভিযোগে প্রকৌশলী মুহাম্মদ আবু হানিফকে হুমকি ও গালাগাল করতে থাকেন।
একপর্যায়ে তাঁরা আবু হানিফকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান তাঁকে ডেকেছেন বলে তুলে নিয়ে যান। এ সময় দায়িত্বরত আনসার সদস্য বাধা দিলে তাঁকেও মারধর করা হয়। এ ঘটনায় চার দিন পর গত রোববার মামলা নিয়েছে পুলিশ।
আগেও এমন হয়েছে
প্রকৌশলীদের মেরে নাক–মুখ ফাটিয়ে দিয়ে পরে ভুল–বুঝাবুঝি বলে চালিয়ে দেওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী অমিনুল ইসলাম মৃধাকে শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় বদলি করা হয়।
তাঁর জান খাতরায় ছিল। এর আগে তার ওপর দুই দফা হামলা হয়। মারধরে আহত হয়ে দুবারই তিনি থানায় গিয়ে মামলা করেছিলেন। পুলিশ আসামিদের চিনতে পারলেও আটকাতে পারেনি। পুলিশ সেই সময় জানিয়েছিল, সব আসামি পলাতক। তাদের মধ্যে একজন বিদেশে পালিয়ে গেছেন।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানীর ২০২৩ সাল শুরু হয়েছিল মারধরের মধ্য দিয়ে। গত ৩১ জানুয়ারি বিক্ষুব্ধ এক ঠিকাদার সাহাবুদ্দিন কোম্পানি আর তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী ওই প্রকৌশলীকে মারধর করেন।
এতে বিভিন্ন জেলা–উপজেলায় কর্মরত বিক্ষুব্ধ প্রকৌশলীরা নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। সেই সময় তাঁরা এই বলে আওয়াজ তুলেছিলেন, আরও অনেক নির্বাহী প্রকৌশলী হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন। আমরা এসবের প্রতিকার চাই। আমরা সব সময় কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতায় থাকি, এসব সন্ত্রাসী আইনের ফাঁকে ছাড়া পেয়ে আরও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে…।
মারধরের শিকার প্রকৌশলীদের বেশ দীর্ঘ তালিকা তাঁরা পেশ করেছিলেন। সেই তালিকায় ফেনী সদর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সমশের আলী, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. নূর আলম, বগুড়ার কাহালু পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী, রাজশাহীর গণপূর্ত কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন, নাটোরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান প্রমুখের নাম ছিল।
তাঁরা বিভিন্ন সময়ে বিক্ষুব্ধ ঠিকাদার কোম্পানি বা ঠিকাদারদের গুন্ডাদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন, রক্তাক্ত হয়েছেন, বিচার চেয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রকৌশলীরা তাঁদের নিজের দপ্তরে মারধরের শিকার হয়েছেন। দু–একটি ক্ষেত্রে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ঠিকাদার বা তার পাঠানো লোকজন হামলা ও মারধর করেছেন। তালিকা দেখে মনে হতে পারে, মারধরের এই ‘সংস্কৃতি’ কেবল মফস্সলেই চলছে।
খোদ রাজধানীতেও এ রকম ঘটনার নজির আছে। পাঠকের নিশ্চয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকৌশলী জরিনা খানমকে মারধর করে রক্তাক্ত করার কথা মনে আছে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওই নারী প্রকৌশলী ছিলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের (বিআইডব্লিউটিএ) যান্ত্রিক ও নৌপ্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। তাঁকে তাঁর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ে এক যুবলীগ নেতা মারধর করেন। প্রকৌশলী জরিনা খানম রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই তাঁকে সেদিন মারধর করা হয়েছিল।
এসবের কি বিচার হয়
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব হামলা–মারধরের ঘটনায় সমঝোতার জন্য রাজনৈতিক চাপ থাকে। তাই মামলা গ্রহণ প্রক্রিয়া চলে ‘গদাই লস্করি’ চালে। আসামির তালিকায় কাকে রাখা হবে না–হবে, তা নিয়ে চলে নানা গবেষণা, মতামত ও পরামর্শ। কে কার ছোটভাই, বড়ভাই অথবা মামুর ছেলে—সেই সবের চুলচেরা বিশ্লেষণ করার পর মামলা দায়ের করা হয়। সদ্য ঘটে যাওয়া কোম্পানীগঞ্জের ঘটনায় তার ব্যাতয় ঘটেনি।
পাঁচ–ছয় দিন চলে গেছে সলাপরামর্শে। অনেক সময় গণমাধ্যম অতিমাত্রায় সরব হয়ে উঠলে লোক দেখানো গ্রেপ্তার আর জামিনের খেলা চলে। দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। যেমনটি হয়েছিল লালমনিরহাটে ২০১৯ সালের এপ্রিলে।
লালমনিরহাটের সেই ঘটনায় নির্মাণাধীন সড়কের কাজ তদারকিতে যাওয়া আদিতমারী উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী জাকিরুল ইসলাম ও কার্যসহকারী আশরাফুল ইসলামের ওপর দলবল নিয়ে হামলা চালান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি এ কে এম হুমায়ুন কবির ‘কোম্পানি’।
এ নিয়ে মামলা–মোকদ্দমা আর লেখালেখি হলে ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এবং সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত’ থাকার কারণ দেখিয়ে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৩৪ (ঞ) ধারামতে সব পদপদবি থেকে হুমায়ুনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ২০২০ সালের ১৯ জুলাই চাঁদপুর শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী নুরে আলমকে প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। ওই ঘটনার পর চেয়ারম্যানকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের সেই আদেশ আদালতে টেকেনি। চেয়ারম্যান আবার স্বপদে বহাল হন।
অনেক সময় মারধরের শিকার হওয়ার পর প্রকৌশলীকে উল্টো বদলি করে দেওয়া হয় দূরে কোথাও। সেখান থেকে এসে ওই প্রকৌশলীর পক্ষে মামলা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি আর থাকে না। একসময় মামলা খারিজ হয়ে যায়।
কেন প্রকৌশলীরা বেশি মার খান
এই প্রশ্ন শুনে অবসরে যাওয়া কোনো এক প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী এমনভাবে মুখের দিকে তাকালেন, যেন প্রশ্নটির উত্তর সবারই জানা। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি বা না করি, অনেক ক্ষেত্রেই ঠিকাদার আর তত্ত্বাবধানে থাকা প্রকৌশলীর মধ্যে একটা “আনহোলি” বোঝাপড়া গড়ে ওঠে। অনেক সময় নির্ধারিত কমিশনের কথা শোনা যায়। কেউ এই বৃত্তের বাইরে গেলেই ঝামেলা হয়।
নির্মাণ বা সরবরাহের ঠিকাদারিতে কমিশন বা বকশিশ যা–ই বলেন, আগেও ছিল, এখনো আছে। তবে আগে চোখে লজ্জার একটি পর্দা ছিল, এখন আর সেটি নেই। ঠিকাদারেরা আগে মিস্ত্রি পালতেন, এখন পালেন গুন্ডা বা হেলমেট বাহিনী। ঠিকাদার মনে করেন, কমিশন যখন তিনি দিয়েছেন, তখন যা খুশি তা–ই করবেন। এখন সাধারণ মানুষের একধরনের উপলব্ধি হচ্ছে, প্রকৌশলী মানেই ঘুষখোর। মানুষের এই মনে করার বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে অনেক ঠিকাদার প্রকৌশলীদের ফাঁদে ফেলেন।’
সাবেক এই প্রধান প্রকৌশলী স্কুলজীবনে আমার সহপাঠী ছিলেন। সেই ভরসায় নাম না প্রকাশের শর্তে কথাগুলো বলেছিলেন। সত্য–মিথ্যা অথবা মিথ তিনিই জানেন। বাইরে থেকে আমাদের পক্ষে সব কিছু বোঝা সম্ভব নয়। তবে আমরা কেবল জানি, প্রকৌশলীদের এই মারধর শিগগিরই বন্ধ হওয়ার নয়।