বছরের প্রথম তাপপ্রবাহ

সতর্কবার্তা-২ ০৬ এপ্রিল ২০২৩

বছরের প্রথম তাপপ্রবাহ: প্রভাব পড়তে পারে বিভিন্ন মৌসুমি ফল এবং রবি শস্যের ফলনের উপর

বছরের প্রথম তাপপ্রবাহ দাবানল ১ এর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দেশের অনেকগুলো জেলা। এটি একটি মাঝারি শক্তিশালী তাপপ্রবাহ।তাপপ্রবাহের ফলে এবং দিন ও রাতের ব্যাপক তারতম্যের প্রভাব পড়তে পারে বিভিন্ন মৌসুমি ফল এবং রবি শস্যের ফলনের উপর।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রমতে ইতোমধ্যে দেশের কয়েকটি জেলা যেমন ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাসমুহের ওপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং এই তাপ প্রবাহ বিস্তার লাভ করতে পারে। 

বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (bwot) এর তথ্যমতে বছরের প্রথম তাপপ্রবাহ দাবানল ১ এর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা। এটি একটি মাঝারি শক্তিশালী তাপপ্রবাহ।

তাপপ্রবাহ দাবানল ১ এর কারনঃ এই সময়ের ভেতরে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর অংশে একটি উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টি হতে পারে, যেখান থেকে গরম শুস্ক বায়ুর কারনে এই তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হতে পারে। এই বায়ু প্রবাহের জন্য দেশের অনেক এলাকায় সাগরিয় জলীয়বাষ্প বায়ু প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

পূর্বাভাসঃ ০৪ এপ্রিল থেকে ২৫ শে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। মুলত ০৪ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের উপর স্বাভাবিক তাপপ্রবাহ থাকতে পারে তবে ১১ থেকে ২৪ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত বেশি সক্রিয় থাকবে।

তীব্র তাপপ্রবাহঃ প্রায় তীব্র তাপপ্রবাহ যুক্ত এলাকাগুলো হলো, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা। তাপপ্রবাহ চলাকালীন সময়ে অর্থাৎ ১২ এপ্রিল থেকে এইসকল এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০° সেলসিয়াস এর উপরে উঠে যেতে পারে।

তাপপ্রবাহ দাবানল ১ রাজশাহী বিভাগের সকল জেলায় এবং খুলনা ও রংপুর বিভাগের অনেক এলাকায় এক পর্যায়ে তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিতে পারে। তাপপ্রবাহ চলাকালীন সময়ে চিত্রে লাল চিহ্নিত স্থানে ১২ এপ্রিল থেকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩° সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যেতে পারে।

মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এলাকাঃ  সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, মাগুরা, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, ঢাকা, শরিয়তপুর, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম, নিলফামারী, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারিপুর ফরিদপুর, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এই সকল এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮° থেকে ৪০° সেলসিয়াস এর আশেপাশে উঠে যেতে পারে।

স্বাভাবিক তাপপ্রবাহঃ  সিলেট বিভাগের সকল জেলা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, নরসিংদী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ভোলা, খুলনা বিভাগ উপকূল, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেণী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় তাপপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকতে পারে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬°সেলসিয়াস এর আশেপাশে থাকতে পারে।

কৃষিতে প্রভাবঃ তাপপ্রবাহের ফলে এবং দিন ও রাতের ব্যাপক তারতম্যের প্রভাব পড়তে পারে বিভিন্ন মৌসুমি ফল এবং রবি শস্যের ফলনের উপর। হিটশক (তাপজনিত ক্ষতি) বা গরম বাতাস প্রবাহ হলে ধান চিটা হতে পারে। সাথে মৌসুমি ফল গাছে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন পোকার আক্রমণ এবং ফল ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা। এই সময় বৃষ্টির অভাবে মাটিতে রসের পরিমাণ কমে আসে তাই নিয়মিত সেচের মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষি অফিস বা কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরামর্শের মাধ্যমে তাপ্রবাহের ফলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। 

বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাঃ তাপপ্রবাহ দাবানল ১ চলাকালীন সময়ে যে দেশের উপর বৃষ্টি একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে তা নয়, বৃষ্টি আকস্মিকভাবে হবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তবে সেটা তাপপ্রবাহ কে প্রশমিত করতে পারবেনা। তবে সিলেট বিভাগ ও দেশের পূর্ব অঞ্চলে প্রায়ই বৃষ্টি থাকতে পারে। বাংলাদেশ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

তীব্র এই গরমে তাপাঘাত বা “হিটস্ট্রোক” এড়াতে প্রয়োজন যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করাঃ তীব্র গরমে আমাদের শরীরে পানিশূণ্যতার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় মানুষ বিশেষ করে শিশুরা মূর্ছা যেতে পারে। গরমে সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হলো হিটস্ট্রোক। শুরুতে হিটস্ট্রোকের আগে হিটক্র্যাম্প দেখা দেয়, যাতে শরীর ব্যাথা করে, দুর্বল লাগে এবং প্রচন্ড পিপাসা লাগে। পরবর্তী সময়ে হিট ইগজোসশন দেখা দেয়, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মাথাব্যাথা করে এবং রোগী অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফা. ছাড়িয়ে যায়। এটাই হিটস্ট্রোক ।

লক্ষণগুলো
• শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫ ডিগ্রি ফা. ছাড়িয়ে যায়।
• ঘাম বন্ধ হয়ে যায় এবং তক্ব শুষ্ক ও লাল হয়ে যায়।
• নিঃশ্বাস দ্রুত হয়।
• নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
• রক্তচাপ কমে যায়।
• খিঁচুনি হয়, মাথা ঝিমঝিম করে।
• রোগী অসংলগ্ন ব্যবহার করতে থাকে ।
• রোগীর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।
• অজ্ঞান হয়ে যায়, এমনকি শকেও চলে যেতে পারে।

করণীয়
• যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে।
• বাইরে বের হলে সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।
• বাসা থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বের হবেন (যেমন; ছাতা, পানি, রুমাল ইত্যাদি সাথে নেয়া এবং সুতি ও হালকা কাপড় পরিধান করা)।
• নিজে এবং পরিবারের সবাইকে পরিমান মতো পানি পান করান।
• যেহেতু রোজার সময়, ইফতারের পর বেশি বেশি পানি পান করবেন এবং অবশ্যই নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে।
• প্রত্যেকে দৈনিক কমপক্ষে ৩ লিটার পানি পান করুন
• ব্লাড প্রেসার নিয়মিত চেক করুন।
• ঠিকমতো গোসল করুন এবং শরীর ঘাম ও ময়লামুক্ত রাখতে হবে।
• ফল ও শাক্ সবজি বেশি করে খান। চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত।
• নিজের এবং পরিবারের শিশু বা বয়স্ক ব্যাক্তিদের ঠোঁট ও চোখের মণি স্বাভাবিক আছে কিনা দেখুন।
• শ্রমসাধ্য কাজ যথাসম্ভব কম করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নিতে হবে।
• প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করতে হবে।
• বয়স্ক ব্যক্তিরা অনেকক্ষণ যেন রোদে চলাফেরা বা কাজকর্ম না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ

তাপ প্রবাহ

https://live.bmd.gov.bd/

1 thought on “বছরের প্রথম তাপপ্রবাহ”

Leave a Reply