বড় ছুটিতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা

ডিসেম্বর মাস, স্কুলের পরীক্ষা শেষ, জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বড় ছুটি। বড় ছুটিতে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়ি যান। প্রতিবছর এরকম ছুটিতে যাওয়া আসার পথে এবং বাড়িতে থাকার সময় নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পানিতে ডুবে শিশু মুত্য। এছাড়া পরীক্ষাশেষে স্কুলগুলো বনভোজন (পিকনিক) বা শিক্ষা সফরের অয়োজন করে। অসাবধানতার কারণে এসব ক্ষেত্রে ঘটে যেতে পারে নানা দুর্ঘটনা। তাই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

সতর্কতামূলক পদক্ষেপ

পানিতে ডোবা থেকে রক্ষায় করণীয়পানিতে ডোবা থেকে রক্ষায় করণীয়
বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে বেড়াতে গিয়ে পরিবারের অগোচরে কিংবা সাঁতার না জেনে পানিতে নামা ইত্যাদি কারণে। গ্রামের বাড়িতে বা যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন সে স্থান যদি পুকুর বা নদী বা খালের পাশে, সেখানে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। খেলার ছলে বা হাত-পা ধোয়ার জন্য শিশুরা যেন পুকুর, খাল বা নদীর পাড়ে না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। একসাথে একাধিক শিশু ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা অনেক ঘটে। একজন শিশু পানিতে পড়ে গেলে অন্যরা তাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেরাও দুর্ঘটনার শিকার হয়।

পানিতে ডোবা থেকে রক্ষার জন্য যা করা প্রয়োজন:
১) কাছের পুকুর/ডোবা/জলাশয়ের চারপাশে বেড়া দিতে হবে।
২) শিশুদের কোনো অবস্থাতেই জলাশয়ের কাছে বয়স্ক মানুষের তত্ত্বাবধায়ন ছাড়া একা বা দল বেঁধে ঘুরতে যেতে দেওয়া ঠিক নয়।
৪) শিশুরা যেন খেলতে খেলতে বাথরুমের ভিতরে ঢুকতে না পারে সেজন্য বাথরুমের দরজা বাইরে থেকে সবসময় বন্ধ রাখতে হবে। ছোট শিশুরা বাথরুমে পানির বালতিতে পড়ে গিয়েও মারা যায়।
৫) যেসব শিশুর খিঁচুনি বা মৃগীরোগের লক্ষণ আছে তাদের কোনো অবস্থাতেই জলাশয়ের কাছে যেতে দেওয়া যাবে না। বিশেষ করে পুকুরে ডুব দিয়ে গোসল করতে দেওয়া যাবে না।
৬) খিঁচুনি বা মৃগীরোগের লক্ষণ আছে এমন শিশুরা বাথরুমে গেলে দরজা বা ছিটকানি ভিতরে থেকে যেন লক বা বন্ধ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৭) পিকনিকের নামে নৌকার আনন্দ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। লাইফ জ্যাকেট, বয়া না থাকলে নৌকা ভ্রমনের ব্যবস্থা করা ঠিক নয়।


এরপরেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে উদ্ধার করা শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। শিশুকে পানি থেকে তুলে এনে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো সম্ভব।

১ ) শিশু পানিতে পড়ে গেলে দিশেহারা না হয়ে স্বাস্থ্যকর্মীকে ডাকতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে পানি থেকে তুলে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান।
২) পানিতে ডোবা শিশুর প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারে এমন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর ঠিকানা সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
৩) শিশুটির গায়ের ভেজা জামা-কাপড় পাল্টে শুকনো কাপড় বা চাদর জড়িয়ে দিতে হবে।
৪) মুখে ও নাকে কোনো ময়লা থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করুন।
৫) শিশুটির নাকের কাছে হাত দিয়ে, কান নিয়ে অনুভব করতে হবে তার শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে কিনা।
৬) পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করা যায়। তবে এভাবে পানি বের করতে গিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাসে দেরি হতে পারে, আবার পানি ফুসফুসে চলে যেতে পারে। তার চেয়ে মুখের মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়া বেশি কার্যকারী। ঘাড়ের নিচে হাত দিয়ে মুখ হাঁ করে ডুবন্ত ব্যক্তির মুখের সঙ্গে মুখ এমনভাবে লাগাতে হবে যেন কোনো ফাঁক না থাকে।
৭) শিশুর নাক-মুখ একসঙ্গে উদ্ধারকারীর মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে শ্বাস নিতে হবে। দেখতে হবে শ্বাস দেওয়ার ফলে উদ্ধারকৃত শিশুর পেট উঠানামা করছে কিনা। নিজ থেকে শ্বাস না নেয়া পর্যন্ত এমন চলতে থাকবে।
৮) দেখতে হবে নাড়ির স্পন্দন আছে কিনা। যদি না থাকে তাহলে বুকে চাপ দিতে হবে। বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে জোরে চাপ দিতে হবে যেন বুক বেশ খানিকটা দেবে যায়। শিশুর বুক দুই হাত দিয়ে ধরে বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিতে হবে। এভাবে পাঁচবার চাপ দেওয়ার পর আগের মতো শ্বাস দিতে হবে। নাড়ির গতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
৯) দ্রুত হাসপাতাল বা কাছের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং নেওয়ার পথেও কৃত্রিম শ্বাস চালিয়ে যেতে হবে।
বিদ্যালয় থেকে বনভোজন (পিকনিক) এবং শিক্ষা সফরের সময় যেসব বিষয় মেনে চলতে হবে

শিক্ষার্থীরা খেলবে, বেড়াবে, আনন্দ করবে, সেটা তাদের অধিকার এবং সুস্থ বিকাশের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়। সাধারণত দেশের সব স্কুলেই শিক্ষার্থীদের আনন্দ দেওয়া ও একঘেয়েমি দূর করার পাশাপাশি নানা শিক্ষামূলক বিষয় জানানোর কথা চিন্তা করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বনভোজন (পিকনিক) বা শিক্ষা সফরের আয়োজন করে থাকেন। কিন্তু তার মাত্রাটা কেমন হবে, সেটা ঠিক করে দেয়াটাও জরুরি। কিছু বিষয়ে সজাগ থাকলে ভয়াবহ দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা যায়।
শিক্ষা সফর এবং বনভোজনে (পিকনিক) যে সকল সতর্কতা নিতে হবে…

• বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যেখান থেকে দিনের আলো থাকতে থাকতে সবাই ফিরে আসতে পারে। এটা বিদ্যালয়ের ১০ থেকে ১৫ মাইলের বাইরে হওয়া উচিত নয়। দূরে নিয়ে গেলেই যে শিশুরা উপভোগ করবে, সেটা কিন্তু ঠিক নয়।
শিক্ষার্থীরা উপভোগ করে কর্মসূচি। কী কী আনন্দময় কর্মসূচি শিক্ষকরা রাখছেন সেটাই আসল। বিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকার মধ্যেও শিশুদের একটা আনন্দময় দিন উপহার দেওয়া যায়।

• শিক্ষার্থীদের ভ্রমণের সময় প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রীর একটি বাক্স এবং প্রাথমিক চিকিৎসা জ্ঞানসম্পন্ন একজন শিক্ষক অথবা প্রশিক্ষিত ব্যক্তি দলের সাথে থাকতে হবে।

• শিক্ষকদের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকতে হবে। গাদাগাদি করে অনেক দূরে শিশুদের নিয়ে গিয়ে নিজেদের শখ পূরণের চেষ্টাকে অপরাধ হিসেবে দেখতে হবে।

• বনভোজন (পিকনিক) বা শিক্ষা সফরের যাওয়ার গাড়ি ঠিক করার সময় গাড়িটির ফিটনেস সনদ, লাইসেন্স এবং যে গাড়িটি চালাবে সে পেশাদার চালক কিনা তা দেখে নিতে হবে।

• তারপরও যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে কী করতে হবে, সেটা আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখতে হবে যাতে খুব দ্রুত জরুরি চিকিৎসা দেওয়া যায়।

• সর্বোপরি বিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের নেওয়ার একটি পরিষ্কার নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। সেখানে পরিবহন, দূরত্ব, দিনের কর্মসূচি, ফিরে আসার সময় ইত্যাদি বিষয়ে দিক নির্দেশনা থাকবে এবং সেগুলো অমান্য করলে তার জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

Leave a Reply