বদলি শাস্তির বিকল্প নিয়ে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় লিখেছেন গওহার নঈম ওয়ারা (প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)
দেশের উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বদলিকে শাস্তির বিকল্প হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
শিশু নির্যাতন, যৌন হয়রানি, সেবা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, ঘুষসহ ধরা পড়া এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গায়ে হাত তোলার সহজ টোটকা হচ্ছে বদলি। দেশে গণমাধ্যমে এমন অনেক খবরই চোখে পড়ে।
নতুন বছরের ৩০ জানুয়ারি (২০২৩) সংবাদপত্র হাতে নিয়ে দেখি, ‘সেই ভূমি কর্মকর্তা বদলি’ (আগের তহশিলদারেরা এখন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা)। খুবই কামেল এই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনেক দিন থেকেই অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ-কেলেঙ্কারি ও অসদাচরণের অভিযোগ করে আসছিল আমজনতা। আমজনতার অভিযোগের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন কয়েকজন সংবাদকর্মী। বিষয়টি ভূমি কর্মকর্তার পছন্দ হয়নি। তিনি তাঁদের লাঞ্ছিত করে অফিস থেকে বের করে দেন। তাঁকেও শেষ পর্যন্ত বদলি করেই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছে। মেলান্দহ উপজেলার চরবাণী পাকুরিয়া ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা এখন বসবেন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ভূমি কার্যালয়ে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। গত বছরের ১৯ জুলাইয়ের এ ঘটনা প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের শাস্তি হয় বদলি।
গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোসার্জারি বিভাগের একজন কনসালট্যান্টের মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাকে নিয়ে তাঁর কর্মস্থল হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়ে ‘অসাধু চক্রের’ কবলে পড়ে হয়রানির শিকার হন। এ নিয়ে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হলে তদন্তে দোষী প্রমাণিত ১৬ জন কর্মচারীকে বদলি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা হাসপাতালে তাঁদের বদলির নির্দেশ জারি হয় ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে বদলি করা হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে। অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে তাঁকে অপসারণের দাবিতে কর্মচারীরা ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল গত ২৩ জানুয়ারি। ওই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে বদলি করা হয়। হাসপাতালের পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক করা হয়।
ব্রিটিশদের ফেলে যাওয়া ‘কুবুদ্ধি’
ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রে বেয়াড়া ও অসৎ আমলাদের বিদায় না করে অন্যত্র বদলি করার রেওয়াজ ছিল। ধুরন্ধর, অবাধ্য, অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত, ঘুষখোর কিংবা দুর্বিনীত কর্মচারীদের দেশের নানা দুর্গম আর প্রান্তিক অঞ্চলে শাস্তি হিসেবে পাঠিয়ে দেওয়ার সেই রেওয়াজকে বলা হতো ‘পানিশমেন্ট পোস্টিং’। আমরা ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া ওভারকোট, ফুলপ্যান্টের সঙ্গে সেটাও ধরে রেখেছি।
সেকালে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি দ্বীপান্তর বলে একধরনের শাস্তি ছিল। ব্রিটিশ ভারতে রাজবন্দীদের অনেককেই আন্দামানে পাঠিয়ে দেওয়ার নজির আছে। তাঁদের অনেকেই আর ফিরে আসেননি দ্বীপান্তর থেকে। ব্রিটিশরা অস্ট্রেলিয়ায় তাদের বসতি তৈরি করেছিল দ্বীপান্তর দণ্ডে দণ্ডিত আসামিদের দিয়ে। ব্রিটিশরা শুধু দাগি আসামি আর বেয়াড়া রাজনীতিবিদদের দূরে পাঠিয়ে এমন শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখেনি, অপছন্দের আমলাদের ক্ষেত্রেও এই ‘ওষুধ’ ব্যবহার করেছে। সেটারই ধারাবাহিকতা চলছে এখনো।
অপরাধ কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, সাজা বদলি
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অফিসে আসতেন না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাঁকে এত্তেলা (খবর) দিতে দিতে আর সালাম পাঠাতে পাঠাতে হয়রান হয়ে যেতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি রাজশাহী জেলায়। ২০১৬ সালে উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে কোনো মাসেই দু-তিন দিনের বেশি অফিস করেননি তিনি। অফিসের রোজকার কাজ চালাতেন শিক্ষাবিষয়ক তদারকি কর্মকর্তা একাডেমিক সুপারভাইজার। এ নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি শুরু হলে তাঁর শাস্তি হয় বদলি। তাঁকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে পাঠিয়ে দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বলা হয়, জনস্বার্থে এই কাজটি বা তাঁকে বদলির আদেশ জারি করা হয়েছে। এটাও ব্রিটিশদের শিখিয়ে যাওয়া একটা প্রচলিত রেওয়াজ। প্রশ্ন করা যায়, এই বদলিতে এলাকার কোন জনস্বার্থ উদ্ধার হলো? তাঁকে নিয়ে ভুগছিলেন ধর্মপাশার মানুষ। বদলির পর ভুগবেন নানিয়ারচরের মানুষ! এতে কোন ধর্ম রক্ষা হবে?
মাদকের শাস্তি বদলি
রংপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একজন স্টেশন অফিসার দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করতে গিয়ে ধরা পড়েন ক্যামেরায়। তাঁকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ফায়ার স্টেশনে বদলি করা হয়। এতে তাঁর মাদক সেবনে ভাটা পড়বে, নাকি রাঙ্গুনিয়ার নিরিবিলি পরিবেশে তা আরও বেগবান হবে? রাঙ্গুনিয়া ফায়ার স্টেশন নিশ্চয় মাদক নিরাময়কেন্দ্র নয়। ডান কাঁধের বোঝা বাঁ কাঁধে দিলে ডান কাঁধ ক্ষণিকের বিরাম পেলেও বোঝার ওজন কি কমে?
অথচ সরকার মাদকের বিরুদ্ধে নিয়েছে জিরো টলারেন্স বা কোনো সমঝতা নয় নীতি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতা, অর্থ জোগানদাতা ও প্ররোচনাকারী হিসেবে সংশ্লিষ্টতা পেলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এর আগে আইনে কোনো ব্যক্তির কাছে মাদকদ্রব্য সরাসরি পাওয়া না গেলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান ছিল না। সংশোধিত আইনে তারা আর পার পাবে না বলে যখন ধারণা করা হচ্ছে, তখনো চলেছে বদলি দিয়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে পোষ মানানোর চেষ্টা।
আশ্রয়ণ প্রকল্প ও বদলি
গত বছর ২৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক আখাউড়ায় সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে অনিয়মের আলামত পেয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন তিনি। সে সময় তিনি ইউএনও, এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার, ভূমি) ও পিআইওকে (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) ভর্ৎসনা করেন। পরের মাসে ইউএনওকে বদলি করা হয় রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় আর এসিল্যান্ডকে পাঠানো হয় বান্দরবানের থানচি উপজেলায়। প্রয়োজন ছিল অনিয়মের সুলুক সন্ধান করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া। বদলি করে দিলেই অনিয়ম দূর হয়ে যাবে, এমন বিশ্বাসের পেছনে আদৌ কোনো যুক্তি আছে? নাকি জেলা প্রশাসক বা যাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন, তাঁদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি ছিল না? নাকি তাঁরা প্রমাণ করতে পারবেন না জেনেই বদলি করে ‘দেখে নেওয়ার খায়েস’ মিটিয়েছেন? কেউ এমন অভিযোগ করলে কাগজপত্রে কি কোনো জবাব থাকবে?
গাজীপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ও সঠিক মালামাল ব্যবহার না করাসহ বেশ কয়েকটি অনিয়মের অভিযোগে সদরের ইউএনও এবং পিআইওকে বদলি করা হয় গত বছরের মার্চে। এর মধ্যে ইউএনওকে পাঠানো হয় বরিশালে আর পিআইওকে সেই বান্দরবানে।
গৃহহীনদের দেওয়া ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আমতলীর ইউএনওকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রালয়ে ‘শাস্তিমূলক বদলি’ করা হয়। একে একে বদলির চক্করে পড়েন শেরপুরের ইউএনও, মুন্সিগঞ্জ সদরের ইউএনও, এসিল্যান্ড এবং সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের ইউএনওসহ আরও অনেকে। কারও কারও বিরুদ্ধে অবশ্য বিভাগীয় মামলার কথা বলা হয়েছিল।
নারীর মর্যাদাহানির শাস্তিও বদলি
রংপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পুলিশ সুপারের কথা পাঠকের নিশ্চয়ই মনে আছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে একটি সংবাদ সম্মেলন করে আলোচনার জন্ম দেন তিনি। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি একজন নারী চিকিৎসকের নিম্নবর্ণের একজনকে বিয়ে করা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর যে নিজের ইচ্ছামতো সঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার আছে, সেটাই তাঁর বিশ্বাসে ছিল না। এরপরই মূল ধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর মন্তব্যের পক্ষে–বিপক্ষে কথা বলতে শুরু করে অনেকে। একজন সরকারি কর্মকর্তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস আর দেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পার্থক্য থাকলে রাষ্ট্র কার পক্ষ নেবে? সাংবিধানিক অধিকারে অবিশ্বাসী একজনকে দেশের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া যায়? সেই প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট হিসেবে বদলি করা হয়। তিনি পুলিশদের কী শেখাবেন?
বদলি শাস্তির বিকল্প নয়
দেশের উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বদলিকে শাস্তির বিকল্প হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ‘অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড বনাম মো. হানিফ শেখ এবং অন্যান্য’ শিরোনামে এক রায়ে আপিল বিভাগ এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। গত বছর ৩১ জুলাই প্রকাশিত রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে।
পাঠক নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, বেশির ভাগ বদলি হচ্ছে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে। এর বাইরেও আছে রংপুরের কাউনিয়া থেকে ভোলার চর ফ্যাশনে, সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে খুলনার ডুমুরিয়ায় ইত্যাদি। তবে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান শাস্তিমূলক বদলির আদর্শ স্থল হয়ে উঠছে। বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনেও খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ভয় দেখানো হয়। ২০২২ সালে নবনির্বাচিত এক চেয়ারম্যান তাঁর উপজেলার ইউএনওকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘বৈমাত্রেয় ভাব দেখিয়ে আমাদের ছেলেপেলেদের পিটিয়েছেন। এর হাড়ভাঙা জবাব আমি ইনশাল্লাহ দিব। ইউএনও মহোদয় আপনি জেনে রাখুন, আপনি নিস্তার পাবেন না মন্ত্রীর রোষানল থেকে। খাগড়াছড়ি, বান্দরবান বদলি করা হবে আপনাকে।’ এ দেশের আমলাতন্ত্রের শুরু থেকে পানিশমেন্ট পোস্টিং বা শাস্তিমূলক পদায়নযোগ্য কিছু স্থান অলিখিতভাবে চিহ্নিত করা হয়। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এসব স্থানে সবচেয়ে গরিব, নিরুপায়, অসহায় আর নিরীহ মানুষের বসবাস। সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, চৌহালী, থানচি, শাল্লা, দিরাই, পানছড়ি, লক্ষ্মীছড়িতে কারা থাকেন? তাঁরা দেশের আর পাঁচটা মানুষের মতো খাজনা দেন, আইন মেনে চলেন। তবে কেন তাঁরা অন্য জায়গার মরা ফুল দিয়ে ফুলদানি সাজাবেন।
যে কাজ করে না, যেটা করার সেটা না করে অন্য কিছু করে তাদের অলসতা, অসততা আর নির্লিপ্ততার বোঝা কেন প্রান্তিক অঞ্চলে বাধ্য হয়ে বসবাসকারী নির্দোষ সাধারণ মানুষ বহন করবে? দোষী কর্মীদের পাহাড়ে, চরে বা দ্বীপ উপজেলায়, দ্বীপ ইউনিয়নে পাঠিয়ে এসব অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের যে অপমান করা হয়, সেটা যারা বোঝে না, তাদের অস্বচ্ছ মানসিকতার কি অসততার আরেকটা রূপ নয়?
ভুলে গেলে চলবে না, দেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকাও ছিল এসব অঞ্চলের জনপদের। তবে কেন এসব অঞ্চল বারবার অযোগ্য, অসৎ, অলস সরকারি কর্মকর্তা আর কর্মীদের ভার বহনের সহজ ঠিকানা হবে। এসব অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষেরা অন্য সব অঞ্চলের মানুষের মতো যোগ্য ও সৎ রাজকর্মচারীর সেবা পাওয়ার সমান অধিকার রাখে। এসব অঞ্চলকে পিছিয়ে রেখে কি দেশ এগোতে পারবে? ভৌগোলিক কারণে দুর্গম এলাকার অসহায় মানুষদের অবস্থার উন্নয়নের জন্য যেখানে মেধাবী, সৎ আর দক্ষ কর্মীদের প্রয়োজন, সেখানে আমরা পাঠাচ্ছি উল্টো প্রকৃতির কর্মীদের।
কথিত এসব দুর্গম এলাকা যেখানে বিশেষ আগ্রহ আর নজর দেওয়া প্রয়োজন, সেখানে তারা শিকার হচ্ছে প্রশাসনিক অবহেলার। তাই এসব এলাকার বদলি হওয়া উচিত উপহারমূলক বদলি। শাস্তির বদলি নয়। এসব এলাকায় কাজ করলে তাদের পদোন্নতির এক ধাপ বা দুই ধাপ তাঁরা এগিয়ে যাবেন, এমন ব্যবস্থা করা দরকার। এখনকার ব্যবস্থায় এসব এলাকায় বদলি হয়ে আসার পরের দিন থেকেই কর্মকর্তা–কর্মচারীরা শুরু করেন বদলির তদবির। তদবির-তকদিরের ফলাফল অনুকূলে আনার জন্য যা যা করার সবই তাঁরা করতে থাকেন। মন দিয়ে কাজ করা দূরে থাকুক, মন খারাপ এসব মানুষ খারাপ থেকে খারাপতর আচরণ শুরু করেন সেবাপ্রার্থী, সহকর্মী, সাক্ষাৎপ্রার্থী, এমনকি রোগী কিংবা পরীক্ষার্থী সবার সঙ্গে। আরও ‘বেপরোয়া’ হয়ে ওঠেন তাঁরা। ভাবেন, কী আর হবে? আর কোথায় বদলি করবে? এই তো!
যাঁদের তদবির, ধরপাকড় বা খুশি করার ক্ষমতা নেই অথবা বাবা, শ্যালক বা মায়ের ভাই নেই, তাঁরা পড়ে থাকেন মনমরা বন্দীর মতো। কাজ তাঁরাও করেন না, কাজ তাঁদের তাড়া করলেও তাঁরা রা–শব্দ করেন না। এক জায়গার লাশ আরেক জায়গায় যখন খুনিরা ফেলে যান, তখন সেখানকার নিরীহ মানুষদের কষ্ট বাড়ে। পুলিশ প্রকৃত ঘটনা না জানা পর্যন্ত তাদের নিয়ে টানাহেঁচড়া করে। খুনিরা দূর থেকে হাসে, হাওয়ায় মিলিয়ে থাকার চেষ্টা করে। এ প্রথা বন্ধ হোক।