পরিস্থিতি প্রতিবেদন- ২৯ ২৬ অক্টোবর ২০২৩
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে রেল দুর্ঘটনা: ১৭ জন নিহত এবং আহত ৭৫ জনেরও বেশি
গত এক দশকে বাংলাদেশে আর কোন রেল দুর্ঘটনায় এতো মানুষ মারা যায়নি
২৩ অক্টোবর ২০২৩ কিশোরগঞ্জ থেকে আসা এগারোসিন্ধুর গোধূলি নামের একটি ট্রেন ২৩ অক্টোবর দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে ইঞ্জিন বদল করার পর যখন জগন্নাথপুর রেল ক্রসিং পার হচ্ছিল, তখন ঢাকা থেকে আসা একটি মালবাহী ট্রেন ধাক্কা দিলে যাত্রীবাহী তিনটি বগি উল্টে যায়। এতে ১৮ (মরদেহ হস্তান্তর করা হয় ১৬ জনের) জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ৭৫ জনেরও বেশি।
সড়ক, নৌ ও রেলপথে দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে রেল দুর্ঘটনায় এটি সবচেয়ে বড় প্রাণহানিকর দুর্ঘটনা।
রেলের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ি মালগাড়িটি সিগন্যাল না মানার কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক এবং পরিচালককে (গার্ড) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে সরকারের তিন বিভাগ থেকে গঠন করা চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে তিন সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক হাবিবুর রহমানকে। দুর্ঘটনার দিন বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে করা হয় দুটি তদন্ত কমিটি। একটির প্রধান বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হাসান মাহমুদ। এ কমিটি তিন সদস্যের। অপর কমিটির প্রধান রেলওয়ে ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা। এ কমিটি পাঁচ সদস্যের। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস থেকে করা আরও একটি তদন্ত কমিটি আছে। পাঁচ সদস্যের কমিটির প্রধান লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম। কিন্তু ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে তদন্ত কাজ শুরু করেনি।
২৫ অক্টোবর সকালে ভৈরব রেলওয়ে থানায় ‘বেপরোয়া, গাফিলতি ও তাচ্ছিল্য পূর্ণভাবে’ ট্রেন পরিচালনার ধারায় মামলাটি করেন দুর্ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের ছোট ভাই বিল্লাল হোসেন। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে নজরুলের মৃত্যু হয়। মামলায় মালবাহী ট্রেনটির চালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী চালক আতিকুর রহমান ও পরিচালক (গার্ড) মো. আলমগীরকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের অভিযুক্তের তালিকায় রাখা হয়।
২৪ অক্টোবর ভৈবর স্টেশনের আউটারের কাছের এই দুর্ঘটনা শুধু নয়, এর আগেও সিগনালিংয়ের সমস্যার কারণে বাংলাদেশে রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছর এপ্রিল মাসেই, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে মালবাহী ট্রেন ও একটি যাত্রীবাহী এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার পিছনে সিগনালিংয়ের সমস্যা ছিল বলে সে সময় বলেছিলেন বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। সেবারেও ট্রেনের চালক এবং সহকারী চালককে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য মালবাহী ট্রেনের চালককেই দায়ী করলেন ভৈরবের স্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ। তিনি জানান, ভৈরবে সিগন্যাল ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়। আমি চাইলেও বিপরীতমুখী দুটি ট্রেনকে একসঙ্গে চলাচল করার সিগন্যাল দিতে পারবো না।
রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যাঁরা সিগন্যাল দেন তাঁদের কিছু গাফিলতি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।