Foundation For Disaster Forum

(A Disaster Preparedness Network)
দুর্যোগ ফোরাম

সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু পরিস্থিতি

         ১৪ নভেম্বর ২০২২

 

ডেঙ্গু ব্যাপক হারে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি বছর (১৩ নভেম্বর, ২০২২ পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে ২০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে কোনো বছর ডেঙ্গুতে এতো মৃত্যু হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপে কিছু বিশেষ দিকের কথা বলছে, যেমন: দিনে বা রাতে যেকোন সময় এডিস মশা কামড়াতে পারে।  

সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের একটি বড় অংশই শিশু। এ বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বড় অংশই শিশু। এছাড়া যে শিশু দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে তার শারীরিক জটিলতা বেশি দেখা দিচ্ছে। শিশুরা সাধারণত তাদের শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন বা সতর্ক না হওয়ায় তাদের ওপর এ রোগের প্রভাব ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও করণীয়

১. সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এর সাথে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথাএবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‍্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।
২. জ্বর হলেই কি চিন্তিত হবেন?
এই সময়ে জ্বর হলেই সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোন ভাবেই এই সময় জ্বরকে অবহেলা করা উচিত নয়।
৩. বিশ্রামে থাকতে হবে
জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকা ভাল।
৪. খাবার
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে রক্তনালি থেকে জলীয় অংশ বেরিয়ে যায়। জলীয় অংশ বেরিয়ে গেলে রক্তচাপ কমে যায়, রোগীর ডেঙ্গু শকড এর আলামত দেখা দিতে পারে। তাই জ্বরের রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন – ডাবের পানি, লেবুর শরবত, তাজা ফলের রস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে শুধু পানিই খেতে হবে, তরল খাবার খেলেও চলবে।
৫. যেসব ওষুধ খাওয়া উচিত নয়
জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক মাত্রায় প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। বিশেষ করে কারো যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
৬. ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?
অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা হতে পারে, প্রচুর বমি হতে পারে, নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে এবং রোগী কিছুই খেতে পারেনা এসব ক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো।

শিশুর ডেঙ্গু হলে করণীয়

• শিশুর ডেঙ্গু হলে তাকে বিশ্রামে রাখুন, প্রচুর পানি বা তরল খেতে দিন। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল সিরাপ বা বড়ি ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পরপর খেতে দিন। ডেঙ্গুতে ২-৩ দিন পর যখন জ্বর কমে যায়, তখনই জটিলতা দেখা দেওয়ার সময়। এ সময় প্রতিদিন রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার পরিমাণ দেখা উচিত।
• অণুচক্রিকার সংখ্যা কমতে থাকলে, শিশু বারবার বমি করলে, খেতে না পারলে, পেটে ব্যথা হলে, শিশুর মধ্যে অতি অস্থিরতা বা নিস্তেজ ভাব দেখা দিলে, মুখ-দাঁত–নাক দিয়ে রক্তপাত হলে কিংবা কালো পায়খানা অথবা কালো রক্তবমি কিংবা রক্তের মত প্রস্রাব করলে অবশ্যই হাসপাতালে নিন। মুখ-চোখ ফ্যাকাশে মনে হলে, হাত-পা অতিরিক্ত ঠান্ডা মনে হলে, ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব না করলে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। জ্বর ভালো হওয়ার পরও কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে।
• বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুদের খুবই সাবধানে রাখতে হবে। তারা যেন ফুলহাতা জামা কাপড় পরে হাত পা যতোটা সম্ভব ঢেকে রাখে। শিশুরা দিনে ঘুমালেও মশারি টাঙিয়ে দিতে হবে।
• আরেকটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হতে পারে মশানিরোধক ক্রিম ব্যবহার। মশার কামড় থেকে দূরে রাখতে গ্রামে এখন অনেকে শিশুর হাত-পায়ে নিশিন্দাপাতার রস লাগিয়ে দেয়। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
• যদি শিশুর মা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে সেই ভাইরাসের কোন প্রভাব মায়ের বুকের দুধে পড়ে না। কাজেই আক্রান্ত অবস্থায় মা তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো

• প্রথমেই এডিস মশার উৎসস্থান ধ্বংস করতে হবে। এডিস মশা সাধারণত গৃহস্থালির পরিষ্কার স্থির পানি যেমন ফুলের টব, গাড়ির টায়ার বা ডাবের খোলে বৃষ্টির জমা পানি ইত্যাদি জায়গায় থাকে। তাই এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে এমন স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে। বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
• দই বা যেকোনো খাবারের ভাড় বা কৌটা বাইরে ফেলবেন না। এসব পাত্রেও পানি জমে থাকতে পারে।
• অনলাইনে খাবার বা অন্য কোনও কিছু আনলে, সেই পাত্র বা প্যাকেটটি ছিদ্র করে বা ভেঙ্গে যথাযথ জায়গায় ফেলে দিন।
• বাথরুমে যদি পানি ধরে রাখতে হয় তাহলে পানির পাত্র সপ্তাহে অন্তত একবার ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ভালো করে ধুয়ে আবার পানি ভর্তি করুন।
• দিনে ও রাতে শিশু ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারির ভেতরে রাখতে হবে। বিশেষ করে নবজাতক শিশুকে সার্বক্ষণিক মশারির ভেতরে রাখা জরুরি। কেননা ডেঙ্গু আক্রান্ত কাউকে এডিস মশা কামড়ানোর পর যদি কোন শিশুকে কামড়ায় তাহলে তার শরীরেও ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাসপাতালে কোন শিশু যদি অন্য রোগের চিকিৎসাও নিতে আসে, তাহলে তাকেও মশারির ভেতরে রাখতে হবে।
• শিশুদের শরীরে কয়েক ঘণ্টা অন্তর অন্তর মসকুইটো রেপেলেন্ট অর্থাৎ মশা নিরোধীকরণ স্প্রে, ক্রিম বা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশুদের এমন পোশাক পড়াতে হবে যাতে করে হাত ও পা সম্পূর্ণ ঢাকা থাকে।
• মশা প্রতিরোধক অ্যারোসল, মশার কয়েল বা ফাস্ট কার্ড শিশু থেকে শুরু করে সবার জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। এর পরিবর্তে মসকুইটো কিলার বাল্ব, ইলেকট্রিক কিলার ল্যাম্প, ইলেকট্রিক কয়েল, মসকুইটো কিলার ব্যাট, মসকুইটো রেপেলার মেশিন, মসকুইটো কিলার ট্র্যাপ ইত্যাদির সাহায্যে নিরাপদে মশা ঠেকানো যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে এই সরঞ্জামগুলো যেন শিশুর নাগালের বাইরে থাকে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
• হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে নিজেদের চাদর, বিছানা বিশেষ করে মশারি নিয়ে যেতে হবে।

Leave a Reply