আমাদের সচেতনতাই ডেঙ্গু থেকে বাঁচাতে পারে

ডেঙ্গু শনাক্তের দিক থেকে জুলাই মাসকে ছাড়িয়েছে আগস্টের প্রথম ১০ দিন। গত জুলাই মাসে ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৮৬। আগস্টের প্রথম ১০ দিনে তা হয়েছে ২ হাজার ৩২১ জন।
২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪ হাজার ৯৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর শিশুরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। শিশুদের ডেঙ্গুজ্বরে নানা জটিলতা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি আছে।
সাধারণত বাসার ভেতরে এবং আশেপাশে পাশের ময়লার স্তূপের পাশে জমা পানি থেকেই এডিস মশার বিস্তার ঘটছে। কোনো কোনো বাসা হয়ত অনেকদিন ধরে খালি পড়ে আছে, সেখান থেকে এডিস মশার বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া বেশিরভাগ বাড়িতে দেখা যায় ছাদের সাথে লাগোয়া সিঁড়িঘরে নানান জঞ্জালের স্তুপ থাকে, বছরের পর বছর পরিষ্কার করা হয় না। সেখান থেকেও এডিস মশার বিস্তার ঘটতে পারে। এ সময় ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সচেতন হতে হবে সবাইকে। বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার রাখা এখন অত্যন্ত জরুরি। ডেঙ্গু রোগ হওয়া থেকে বাঁচাতে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে যেন মশা না কামড়ায় বিশেষ করে শিশুদের।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন যা করা প্রয়োজন
• প্রথমেই এডিস মশার উৎসস্থান ধ্বংস করতে হবে। এডিস মশা সাধারণত গৃহস্থালির পরিষ্কার স্থির পানি যেমন ফুলের টব, গাড়ির টায়ার বা ডাবের খোলে বৃষ্টির জমা পানি ইত্যাদি জায়গায় থাকে। তাই এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে এমন স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে। বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
• দই বা যেকোনো খাবারের কৌটা বাইরে ফেলবেন না। এসব পাত্রেও পানি জমে থাকতে পারে।
• অনলাইনে খাবার বা অন্য কোনও কিছু আনলে, সেই পাত্র বা প্যাকেটটি ছিদ্র করে বা ভেঙ্গে যথাযথ জায়গায় ফেলে দিন।
• বাথরুমে যদি পানি ধরে রাখতে হয় তাহলে পানির পাত্র সপ্তাহে অন্তত একবার ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ভালো করে ধুয়ে আবার পানি ভর্তি করুন।
• দিনে ও রাতে শিশু ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারির ভেতরে রাখতে হবে। বিশেষ করে নবজাতক শিশুকে সার্বক্ষণিক মশারির ভেতরে রাখা জরুরি। কেননা ডেঙ্গু আক্রান্ত কাউকে এডিস মশা কামড়ানোর পর যদি কোন শিশুকে কামড়ায় তাহলে তার শরীরেও ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাসপাতালে কোন শিশু যদি অন্য রোগের চিকিৎসাও নিতে আসে, তাহলে তাকেও মশারির ভেতরে রাখতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন যা করা প্রয়োজন
• শিশুদের শরীরে কয়েক ঘণ্টা অন্তর অন্তর মসকুইটো রেপেলেন্ট অর্থাৎ মশা নিরোধীকরণ স্প্রে, ক্রিম বা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশুদের এমন পোশাক পড়াতে হবে যাতে করে হাত ও পা সম্পূর্ণ ঢাকা থাকে।
• মশা প্রতিরোধক অ্যারোসল, মশার কয়েল বা ফাস্ট কার্ড শিশু থেকে শুরু করে সবার জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। এর পরিবর্তে মসকুইটো কিলার বাল্ব, ইলেকট্রিক কিলার ল্যাম্প, ইলেকট্রিক কয়েল, মসকুইটো কিলার ব্যাট, মসকুইটো রেপেলার মেশিন, মসকুইটো কিলার ট্র্যাপ ইত্যাদির সাহায্যে নিরাপদে মশা ঠেকানো যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে এই সরঞ্জামগুলো যেন শিশুর নাগালের বাইরে থাকে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
• যদি শিশুর মা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে সেই ভাইরাসের কোন প্রভাব মায়ের বুকের দুধে পড়ে না। কাজেই আক্রান্ত অবস্থায় মা তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।
শিশুর ডেঙ্গু হলে করণীয়
শিশুর ডেঙ্গু হলে তাকে বিশ্রামে রাখুন, প্রচুর পানি বা তরল খেতে দিন। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল সিরাপ বা বড়ি ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পরপর খেতে দিন। ডেঙ্গুতে ২-৩ দিন পর যখন জ্বর কমে যায়, তখনই জটিলতা দেখা দেওয়ার সময়। এ সময় প্রতিদিন রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার পরিমাণ দেখা উচিত।
অণুচক্রিকার সংখ্যা কমতে থাকলে, শিশু বারবার বমি করলে, খেতে না পারলে, পেতে ব্যথা হলে, শিশুর মধ্যে অতি অস্থিরতা বা নিস্তেজ ভাব দেখা দিলে, মুখ-দাঁত–নাক দিয়ে রক্তপাত হলে কিংবা কালো পায়খানা অথবা কালো রক্তবমি কিংবা রক্তের মত প্রস্রাব করলে অবশ্যই হাসপাতালে নিন। মুখ-চোখ ফ্যাকাশে মনে হলে, হাত-পা অতিরিক্ত ঠান্ডা মনে হলে, ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব না করলে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। জ্বর ভালো হওয়ার পরও কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে।

Leave a Reply