বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর তৃতীয় বারের মত হিট অ্যালার্টের মেয়াদ ২৫/০৪/২০২৪ থেকে ২৮/০৪/২০২৪ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শুরু থেকে (০৩/০৪/২০২৪) দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ শুরু হয় এবং ১৫ এপ্রিল থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বইতে শুরু হয়েছে। এরইপ্রেক্ষিতে এর আগে দুইবারসহ তৃতীয় বারের মত সারাদেশে হিট অ্যালার্ট জারি করের বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল (২৪/০৪/২০২৪) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় মংলা জেলায় ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন পর্যন্ত (০৩/০৪/২০২৪ থেকে ২৪/০৪/২০২৪) হিট স্ট্রোকে ৪৫ জন মৃত্যুবরণ করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। এরমধ্যে প্রায় ২৫ জনের বয়স ৫০ থেকে ৭০ বছর। হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়া ব্যাক্তিরদের মধ্যে ৩৬ জনই পুরুষ, যাদেরমধ্যে বেশীর ভাগই শ্রমজীবি এবং কৃষক।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, দেশে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আর হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও দুইজন।
হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়ার পাশাপাশি তীব্র গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হসপিতালে রোগীর ভর্তি সংখ্যা বাড়ছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মধ্যমে এসেছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সূত্রমতে জানিয়েছে, গরমের তীব্রতা বাড়ার আগে হাসপাতালটিতে দৈনিক ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসত। এখন সেখানে প্রতিদিন ১১০০ থেকে ১৩০০ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে। এবং আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে সূত্রমতে, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়তই হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৯ এপ্রিলের পর রোগীর সংখ্যা ৫০০ জনের নিচে নামেনি। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে রোগী ভর্তি থাকে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ জন।
তীব্র গরমে যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে কাজ করে ঝুঁকিটা একটু বেশি। তারা ডিহাইড্রেশনের (পানিশূন্যতা) ঝুঁকিতে থাকে, তারাই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। এজন্য একটানা এক ঘণ্টার বেশি রোদে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সাথে প্রচুর পরিমাণ পানি পান, সম্ভব হলে অল্প পরিমাণ লবণ মিশিয়ে খাওয়া, খাবার স্যালাইন এবং অন্যান্য তরল পানীয় পান করার পরামর্শ দিয়েছৈন চিকিৎসকরা।
তীব্র গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা
দেশে তীব্র দাবদাহ পরিস্থিতিতে গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্দেশনাগুলো হলো;
- তীব্র গরম থেকে দূরে থাকুন, মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিন।
- প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করুন। হেপাটাইটিস এ,ই,ডায়রিয়াসহ প্রাণঘাতী পানিবাহী রোগ থেকে বাঁচতে রাস্তায় তৈরি পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করুন।
- গরম আবহাওয়ায় ঢিলেঢালা পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরুন, সম্ভব হলে গাঢ় রঙিন পোশাক এড়িয়ে চলুন।
- গরম আবহাওয়ায় যদি ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, বমি বমি ভাব দেখা দেয়, তীব্র মাথা ব্যথা হয়, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়, খিঁচুনি এবং অজ্ঞান হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে যান এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তার পাশাপাশি তীব্র গরমে হিটস্ট্রোক এড়াতে করণীয়, শিশুর যত্ন এবং চলমান আবহাওয়ায় সুস্থ থাকতে করণীয় এবং বর্জনীয় সমন্ধে বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কগুলো দেখুন-
ছবিসূত্র: Prokashika
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর