আষাঢ়ের জোয়ার এবং চলমান তাপপ্রবাহে করণীয়

বর্তমান পরিস্থিতি
গত ১৫ জুলাই (২০২২) আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় ভরা কাটালের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার দেখা দিয়েছে। আজকে (১৭ জুলাই ২০২২) চট্টগ্রামে জোয়ারের উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ফুট বেশি, খুলনায় প্রায় ১১ ফুট যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ফুট বেশি এবং বরগুনায় ১০ ফুট যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২.৫ ফুট বেশি। আগামীকাল অর্থাৎ ১৮ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত জোয়ারের পানি বেশি থাকবে। তারপর থেকে জোয়ারের পানি নামতে থাকবে। এই জোয়ারে বাগেরহাট, পটুয়াখালী এবং সাতক্ষীরা অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতি
এপর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী এবং সাতক্ষীরা জেলায় জোয়ারের পানিতে প্রায় ৬৪টিরও বেশি গ্রামসহ কালভার্ট এবং কাঁচা-পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া মিষ্টি পানির পুকুর ও মাছের ঘের ভেসে গেছে, ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলা অফিস প্রাঙ্গন জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। সাতক্ষীরা জেলার কয়রা উপজেলা প্রায় ৫০০ ফুটের মত বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে এবং প্রায় ২২টি কাঁচা ঘর ধসে পড়েছে। বালু উত্তোলন করাকে সাতক্ষীরায় বাঁধ ভেঙে পড়ার কারণ হিসেবে দেখছে স্থানীয় লোকজন। এসব এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

পূর্বাভাস
আগামী ২৮ জুলাই ২০২২ তারিখে অমাবস্যার সময়ে আবারো জোয়ারের পানি বেড়ে যাবে। জোয়ারের পানি বেড়ে বরগুনায় প্রায় ১০ ফুট, খুলনায় প্রায় ১১ ফুট এবং চট্টগ্রামে প্রায় ১৫ ফুটে দাঁড়াতে পারে।
তাছাড়া, প্রতিবছর ভাদ্রের ভরা কাটাল এবং মরা কাটালে জোয়ারের পানি বেশি থাকে। আসন্ন আগস্টের মাঝামাঝি ভাদ্রের ভরা কাটালের প্রভাবে চট্টগ্রামে ১৬ ফুট, খুলনায় ১১.৫ এবং বরগুনায় ১১ ফুটের মত অস্বাভাবিক জোয়ারের সৃষ্টি হতে পারে (টাইড-ফোরকাস্ট ডট কম)।

সতর্কতা
জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এই সময়ে শিশুদের নিরাপত্তা বিশেষ করে যাদের আগে থেকে খিঁচুনী বা মৃগী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝোঁক আছে তাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

তাপপ্রবাহ

বর্তমানে দেশজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে যা আগামী আরো দু-তিন দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল (১৬ জুলাই ২০২২) রংপুর বিভাগের সৈয়দপুর জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ছিল।
তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, প্রবীণ ব্যক্তি, দিনমজুর এবং কৃষিশ্রমিক। এরই মধ্যে রংপুর, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শিশুদের ডায়রিয়া, খিঁচুনি ও বমিসহ জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং চুলকানী রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির খবর বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে।

এই গরমে সুস্থ থাকতে করণীয়

• যথাসম্ভব ঘর/ক্লাসের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে।
• শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। ছায়াযুক্ত জায়গায় যদি এসেম্বলি সম্ভব না হয় তাহলে প্রয়োজনে এসেম্বলি সংক্ষিপ্ত করতে হবে।
• বাইরে যাওয়া আসার সময় অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বের হতে হবে (যেমন; ছাতা, পানি, রুমাল ইত্যাদি সাথে নেয়া)।
• পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে। প্রত্যেকে দৈনিক কমপক্ষে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে।
• শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
• বাড়িতে ফল ও শাক সবজি বেশি করে খেতে উৎসাহিত করতে হবে।
• কোমল পানীয়,ঠান্ডা পানি এবং আইসক্রিম খাওয়া পরিহার করে চলতে হবে।
গরমে শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে

• ডায়রিয়া হলে শিশুকে স্যালাইন দিতে হবে। ওআরএস স্যালাইন না থাকলে চালের গুঁড়ার স্যালাইন প্রস্তুত করে খাওয়াতে হবে।
• শিশুদের খাবার ভালো করে গরম করতে হবে এবং গরম খাবার চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে খেতে দিতে হবে।
• শিশুদের ঠোঁট ও চোখের মণি স্বাভাবিক আছে কিনা তা নিয়মিত চেক করতে হবে।
• শিশুদের নিয়মিত ও ঠিকমতো গোসল এবং শরীর ঘাম ও ময়লামুক্ত রাখতে হবে।

Leave a Reply