সম্প্রতি বাংলাদেশে ছোঁয়াচে চর্মরোগ স্ক্যাবিস বা খোস-পাঁচড়ার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগ বিশেষভাবে ছড়ায় ঘনবসতিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। সাধারণত গরমকালে স্ক্যাবিসের প্রকোপ বেশি দেখা গেলেও, বর্তমানে এটি সারা বছর ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে ৫০ লাখ মানুষ স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্ক্যাবিস কী?
স্ক্যাবিস হলো একটি ছোঁয়াচে চর্মরোগ, যা Sarcoptes scabiei নামক একধরনের ক্ষুদ্র পরজীবী উকুন দ্বারা হয়ে থাকে। এ রোগে তীব্র চুলকানি ও গুটি গুটি র্যাশ দেখা যায়, যা সাধারণত কবজি, আঙুলের ফাঁক, কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে রাতে চুলকানির তীব্রতা অনেক বেড়ে যায়।
প্রথমবার সংক্রমিত হলে লক্ষণ প্রকাশ পেতে ২ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় লাগে, কিন্তু দ্বিতীয়বার হলে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
কিভাবে ছড়ায় স্ক্যাবিস?
স্ক্যাবিস একজন থেকে আরেকজনে খুব সহজে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে—
শিশুরা ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, চাদর, তোয়ালে, গামছা কিংবা বিছানার চাদরের মাধ্যমে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
- বাংলাদেশে স্ক্যাবিস চিকিৎসায় চিকিসকরা মূলত ব্যবহার করার জন্য পারমেথ্রিন ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
- তবে এর পাশাপাশি খোস-পাঁচড়া থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন সব সময় পরিষ্কার পারিচ্ছন্ন থাকা।
- গোসল করার সময় অবশ্যই সাবান ব্যবহার করতে হবে।
- খোস-পাঁচড়ার চিকিৎসায় নিমপাতার ব্যবহার ভালো কাজে দেয়। সাবান দিয়ে ভালোভাবে গোসলে পর নিমপাতা সিদ্ধ পানিতে লবন মিশিয়ে গায়ে ঢালতে হবে।
- খোস-পাঁচড়া আক্রান্ত রোগীর কাপড় চোপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র গরম পানিতে ধুয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
- চুলকানির জায়গাগুলোতে নিমপাতা বেটে লাগালে উপশম হতে পারে।
প্রতিরোধই সর্বোত্তম উপায়
স্ক্যাবিসের কোনো টিকা নেই, তাই প্রতিরোধই এ রোগ মোকাবিলার প্রধান উপায়। নিচের সতর্কতাগুলো মেনে চলা উচিত:
সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা
নিজস্ব ব্যবহার্য জিনিসপত্র অন্যের সঙ্গে ভাগ না করা
পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা
স্ক্যাবিস একটি সংক্রামক হলেও প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সঠিক জ্ঞান, সময়মতো চিকিৎসা, এবং পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব। শিশুসহ পরিবারের সকল সদস্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এগুলো অবশ্যই মেনে চলা উচিত।
ছবি: দুর্যোগ ফোরাম