আনন্দ যেন মৃত্যু ঢেকে না আনে

শিক্ষার্থীরা খেলবে, বেড়াবে, আনন্দ করবে, সেটা তাদের অধিকার এবং সুস্থ বিকাশের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়। সাধারণত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের আনন্দ দেওয়া ও একঘেয়েমি দূর করার পাশাপাশি নানা শিক্ষামূলক বিষয় জানানোর কথা চিন্তা করে বনভোজন (পিকনিক) বা শিক্ষা সফরের আয়োজন করে থাকেন। কিন্তু প্রতিবছরই খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে বনভোজন (পিকনিক) বা শিক্ষা সফরের গাড়ি কোন না কোন দুর্ঘটনায় পড়ে এবং আনন্দ করতে গিয়ে এই নির্মল বিনোদন এক ভয়ঙ্কর পরিণতি ঢেকে আনে। চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর সকালে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা বাস ও মাইক্রোবাসযোগে শ্রীপুর উপজেলায় মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে পিকনিকে যাওয়ার সময় পিকনিকের বাসে বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন শিক্ষার্থী নিহত হন এবং ৬-৭ জন আহত হয়। ইতোমধ্যে কোন কোন বিদ্যালয়, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিক্ষার্থীরা নিজেদের আয়োজনে এবং অভিভাবক পিকনিকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিশু, শিক্ষার্থীরা আনন্দ করবে এটা খুব স্বাভাবিক এবং তাদের মানসিক বিকাশের জন্যও শিক্ষা সফর এবং পিকনিক জরুরী কিন্তু তার মাত্রাটা কেমন হবে, সেটা ঠিক করে দেয়াটাও জরুরি। কিছু বিষয়ে সজাগ থাকলে ভয়াবহ দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা যায়।

  • শিক্ষাসফর বা পিকনিক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের আগেই ধারণা দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিতে হবে। স্থানীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেসব বিধিবিধান আছে তা সবাইকে যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
  • বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যেখান থেকে দিনের আলো থাকতে থাকতে সবাই ফিরে আসতে পারে। এটা বিদ্যালয়ের ১০ থেকে ১৫ মাইলের বাইরে হওয়া উচিত নয়। দূরে নিয়ে গেলেই যে শিশুরা উপভোগ করবে, সেটা কিন্তু ঠিক নয়। শিক্ষার্থীরা উপভোগ করে কর্মসূচি। কী কী আনন্দময় কর্মসূচি শিক্ষকরা রাখছেন সেটাই আসল। বিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকার মধ্যেও শিশুদের একটা আনন্দময় দিন উপহার দেওয়া যায়।
  • শিক্ষার্থীদের ভ্রমণের সময় প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রীর একটি বাক্স এবং প্রাথমিক চিকিৎসা জ্ঞানসম্পন্ন একজন শিক্ষক অথবা প্রশিক্ষিত ব্যক্তি দলের সাথে থাকতে হবে।
  • শিক্ষকদের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকতে হবে। গাদাগাদি করে অনেক দূরে শিশুদের নিয়ে গিয়ে নিজেদের শখ পূরণের চেষ্টাকে অপরাধ হিসেবে দেখতে হবে।
  • বেশির ভাগ পিকনিকের গাড়ি স্থানীয়ভাবে ভাড়া নেওয়া হয়। চালকদের অন্য জেলার রাস্তা সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা থাকে না। বনভোজন (পিকনিক) বা শিক্ষা সফরের যাওয়ার গাড়ি ঠিক করার সময় গাড়িটির ফিটনেস সনদ, লাইসেন্স ও চালক পেশাদার কিনা এবং যে এলাকায় যাচ্ছে সে এলাকা সম্পর্কে ধারণা আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে।
  • তারপরও যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে কী করতে হবে, সেটা আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখতে হবে যাতে খুব দ্রুত জরুরি চিকিৎসা দেওয়া যায়।
  • সর্বোপরি বিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের নেওয়ার একটি পরিষ্কার নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। সেখানে পরিবহন, দূরত্ব, দিনের কর্মসূচি, ফিরে আসার সময় ইত্যাদি বিষয়ে দিক নির্দেশনা থাকবে এবং সেগুলো অমান্য করলে তার জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

অনেক সময় পিকনিকের জন্য শিশু পার্কে ঘুরতে যাওয়ার আয়োজন করে অনেক বিদ্যালয়। শিশু পার্কে খেলাধুলার পাশাপাশি বিভিন্ন রাইড শিশুদের প্রধান আকর্ষণ। কিন্তু অসাবধানতা ফলে এই রাইডগুলো শিশুদের জন্য বিপদজনক হয়ে পড়ে। প্রতি বছরই বিভিন্ন রাইডারে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এত মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। ২০২২ সালে মে মাসে রোলার কোস্টারের পিলারে আঘাত লেগে তেরো বছরের শিশু রাব্বীর মৃত্যু ঘটে। শিশুদের রাইডে উঠানোর ক্ষেত্রে ও শিশু পার্কে বেড়ানোর সময় কিছু বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা উচিত।শিশুদের একা রাইডে চড়তে দেওয়া উচিত নয়। অনেক রাইড আছে যেখানে অভিভাবকদের অনুমতি নাই সেগুলো এগিড়ে চলা উচিত।

ছবি: istock

Leave a Reply