বর্তমান পরিস্থিতি

চলতি বছরের ২০ আগস্ট থেকে দেশের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চল ও উত্তর–পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি ও  উজানের পাহাড়ি ঢল দেশের প্রায় ১১ জেলায় বন্যা সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত হয় এলাকাগুলোর অর্ধকোটি মানুষ। এর দুর্ভোগ শেষ হতে না হতেই ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বিকাল ৩টা থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টা পর্যন্ত কক্সবাজারে রেকর্ড ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ১৯৪৮ সালের পর থেকে এই এলাকায় এত পরিমাণ বৃষ্টিপাত দেখা যায়নি এবং গত দুই দশকে সারাদেশে হওয়া বৃষ্টিপাতের মধ্যে এটা সর্বাধিক। এর আগে ২০১৫ সালে কক্সবাজারে ৪৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিলো। সর্বশেষ ২০০১ সালের ১৪ জুন রেকর্ড ৫৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় সন্দ্বীপে। ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ডটি ১৯৮১ সালের। ১৯৮১ সালের ১৮ই জুলাই নোয়াখালীতে ৫২০ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছিলো। (সূত্র: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর)

কক্সবাজারে এরকম অতি বৃষ্টির জন্য টাইফুন ইয়াগীর প্রভাব রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, ৭ সেপ্টেম্বরে ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট টাইফুন ইয়াগী আঘাত হানে ভিয়েতনাম, চীন ও মিয়ানমারে। তিন দেশে তাণ্ডব চালিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে প্রচুর মেঘ নিয়ে লঘুচাপ আকারে কক্সবাজার উপকূল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর প্রভাবেই সারা দেশেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

ক্ষয়ক্ষতি

কক্সবাজারে নিম্নচাপের প্রভাবে তৈরি হওয়া অতি বৃষ্টিপাতে শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকায় জলাবদ্ধ। এতে যোগাযোগের প্রধান সড়ক সহ ৫০টি উপসড়ক তলীয়ে যাওয়াতে জনদুর্ভোগ চরম আকারে পরিণত হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটিতে কক্সবাজারে ঘুরতে আসা প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক অতি বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আটকা পড়েছেন। এখনো (১৫ সেপ্টেম্বর) পানিবন্দি রয়েছে জেলা সদর সহ ৬ উপজেলার (কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফ, রামু, চকোরিয়া, পেকুয়া) প্রায় ২ শতাধিক গ্রাম। এছাড়াও এই এলাকার দোকানপাট, মার্কেটে পানি ঢুকার কারণে মালামালের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। (সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম)।

ভারী বর্ষণের কারণে শহরের অভ্যন্তরে ১২টির বেশি পাহাড়ে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু অংশে ভূমি ধসের ঘটনা ঘটছে। ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে কক্সবাজারের সদর উপজেলা ও উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু হয়েছেএর মধ্যে একজন নারী, একজন পুরুষ এবং ৪ জন শিশু রয়েছেন। এছাড়া ট্রলার ডুবে ৫ জেলে নিহত হয়েছেন।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বিকেল পর্যন্ত ১১টি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সাগরে থাকা ট্রলারগুলো প্রায় শতাধিক জেলেকে জীবিত উদ্ধার করেছে। কিন্তু এখনো নিখোঁজ ২৭ জন জেলে এরমধ্যে হাতিয়া আমতলী ঘাটে কামরু মাঝির ট্রলারের ১৫ জন রয়েছেন। এই ট্রলারের ১৭ জনের মধ্যে দুজনকে কক্সবাজারের একটি ট্রলার উদ্ধার করেছে। একই ঘাটের রহিম মাঝির ট্রলারের ১২ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। ওই ট্রলারের ১৪ মাঝিমাল্লার মধ্যে দুজনকে নিঝুম দ্বীপের একটি ট্রলার উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসেন। এছাড়া ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেল পর্যন্ত ৬টি ট্রলার ঘাটে ফিরে আসেনি। এর মধ্যে নিঝুম দ্বীপের ৪টি ও জাহাজমারা কাটাখালী ঘাটের ২টি ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা যায়নি। ৬টি ট্রলারে প্রায় ১০০ জন মাঝিমাল্লা রয়েছেন। এখন পর্যন্ত (১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪) ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ট্রলার উপকূলে ফেরত আসতে গিয়ে ইনানী সৈকতের কাছে ডুবে যায়। যার  মধ্যে ৩ জনের মরদেহ সৈকতের নাজিরারটেক, পেঁচারদ্বীপ ও কলাতলী উপকূলে ভেসে এসেছে বলে জানিয়েছেন ট্রলার মালিক সমিতি। অন্যদিকে পটুয়াখালীতে নিখোঁজ হওয়া ১২ জন জেলেকে ভারতীয় জেলেরা কাকদ্বীপ এলাকা থেকে উদ্ধার করেছেন। তাঁরা বর্তমানে (১৫ সেপ্টেম্বর) কাকদ্বীপ মহকুমা আদালতে রয়েছে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক আইন মেনে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে।  

বন্যা সতর্কতা

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ এর তথ্য অনুযায়ী, দেশের সকল প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয়/জোয়ারভাটা প্রবণ নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি গভীর স্থল নিম্নচাপ অবস্থান করছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় উপকূলীয় অঞ্চল ও দেশের মধ্যাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে এই সময় ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।

ছবি সুত্র: সংগৃহীত

Leave a Reply