চলমান বন্যার পরিস্থিতি এবং আসন্ন জোয়ারের সম্ভাবনা

টানা বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলা আগামী পূর্ণিমায় (৩১ অগাস্ট-১ সেপ্টেম্বর) আরো অস্বাভাবিক জোয়ারের সম্ভাবনা!!

পরিস্থিতি প্রতিবেদন- ২৪ ১০ অগাস্ট ২০২৩

বিগত কয়েকদিনের পরিস্থিতি
সাধারণত ভাদ্রের মরা কাটাল, ভরা কাটালে জোয়ারের পানির উচ্চতা থাকে সবচেয়ে বেশি। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে পূর্ণিমায় সাগরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং উপকূলীয় এলাকাসমূহ জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। চলতি বছর শ্রাবণের জোয়ার ভাদ্রের জোয়ারের মতোই উপকূলীয় এলাকাসমূহ প্লাবিত করেছে। সাথে টানা বৃষ্টি, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। গত ৩ আগষ্ট ২০২৩ থেকে টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলার জনজীবন। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থানে ছোট বড় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ৩ অগাস্ট থেকে টানা বৃষ্টি, সাথে পূর্ণিমার কারণে উল্লেখিত এলাকায় জোয়ারের পানি ছিল ১৬ ফুট এবং প্লাবিত হয়েছে অনেক এলাকা। বন্যার কারণে বান্দরবান, কক্সবাজার ইত্যাদি এলাকার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ, স্কুল বন্ধসহ মানুষের প্রাণহানি পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়েছে।

চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস, দেয়াল ধস বন্যার পানিতে এখন পর্যন্ত ২৬ জন নিহত হয়েছে, এদের মধ্যে ৬ জন শিশু।

ভাদ্র-আশ্বিনের জোয়ারে আবারো প্লাবিত হতে পারে উপকূলীয় অঞ্চল
আগের বছরগুলির তথ্য বিশ্লেষন করলে দেখা যায় ভাদ্র-আশ্বিন মাস জোয়ারে উপকূলীয় আঞ্চল প্লাবিত হওয়া নিয়মিত ঘটনা, ২০২২ সালের ১১-১৪ অগাস্ট ও ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সালের ৭ ও ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, এবং এর আগে ২০০৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর উপকূলীয় এলাকাসমূহ জোয়ারে প্লাবিত হয়েছিল।

আসন্ন ভাদ্র মাসের পূর্ণিমার প্রভাবে আগামী ৩১ অগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের ১/২ তারিখের (ভাদ্র ১৩-১৫) দিকে আবারো জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। যদি ঐ সময় বৃষ্টি হয় তাহলে পরিস্থিতি গত ৩ অগাস্ট থেকেও ভয়াবহ হতে পারে এবং দেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল সমূহ পুনরায় প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

টানা বৃষ্টি, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি এবং জোয়ারের ফলে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়ার খবর এসেছে। (মুহুরী নদী, বাঁকখালী নদীর বাঁধ) এই বাঁধসমূহ পরবর্তী অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের আগে যদি মেরামত করা না হয় তাহলে উপকূলীয় এলাকার মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়বে। নিচে গত পূর্ণিমা এবং আসন্ন অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় জোয়ারের পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা দেওয়া হলো। টাইডাল ফোরকাস্ট ডট কম এর তথ্য অনুযায়ি আসন্ন পূর্ণিমায় জোয়ারের ফলে চট্টগ্রাম ছাড়াও কক্সবাজার, খুলনা ও বরগুনা এলাকাসমূহ প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত পূর্ণিমা এবং আসন্ন অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় জোয়ারের পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা (তথ্যসূত্রঃ টাইডাল ফোরকাস্ট ডট কম)

এলাকাঅগাস্ট ১-৩ (পূর্ণিমা)অগাস্ট ১৬-১৮ (অমবস্যা)অগাস্ট ৩১-সেপ্টেম্বর ১ (পূর্ণিমা)
চট্টগ্রাম১৬.০ ফুট১৪.২১ থেকে ১৪.৪৭ ফুট১৫.৬৮ থেকে ১৫.৮১ ফুট
কক্সবাজার১২.৬ ফুট১০.৯৯ থেকে ১১.৩৯ ফুট১২.৬ থেকে ১২.৮৩ ফুট
বরগুনা১১.৬ ফুট৯.৬৫ থেকে ৯.৬৮ ফুট১১.৬ থেকে ১১.১২ ফুট
খুলনা১১.৬ ফুট১০.৪৩ থেকে ১০.৭৩ ফুট১১.৩৯ থেকে ১১.৬৮ ফুট

তথ্যসূত্র: https://www.tide-forecast.com/locations/Chittagong-Bangladesh/tides/latest

ছবিসূত্র: ইত্তেফাক

Leave a Reply